সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একা ভ্রমণ

 আমি নিজের অভিজ্ঞতা লিখতে চলেছি। এই ঘটনা আমি কাউকে বলতে পারিনি, কিন্তু না বললে আমি শান্তি পাচ্ছি না, তাই xossipy.  সোমবার প্রথম পর্ব আসবে। 

আমি এই প্রথম কিছু লিখতে চলেছি, তাও বাংলায়। ভুলত্রুটি হলে সোজাসুজি জানাবেন। 

আশাকরি সবার শুভেচ্ছা, ভালবাসা ও গালাগালি পাব।

মুম্বাইয়ে এসেছি প্রায় ২ মাস হয়ে গেল। কি করে যে ২ মাস কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। প্রথমে ঠিক করেছিলাম অফিসের পাশে ঘর ভাড়া নেবো, কিন্তু বাড়ি ভাড়া দেখে তো চক্ষু চরক গাছ। তারপরে ভাবলাম পিজি, দু চারটে দেখলামও। কিন্তু পছন্দ হলো না, ওভাবে কি থাকা যায়! শেষমেষ আবার ঘর ভাড়া, এবার মুম্বাইয়ে না একটু দূরে ঠানেতে। 

এখন জীবন মানে সকালে ঘুম থেকে ওঠো, রেডি হও, ট্রেনে করে অফিস যাও, কাজ শেখো, জ্ঞান শোনো, আবার ট্রেনে করে বাড়ি ফেরো। তারপরে যদিও অখন্ড অবসর। মাস খানেক আগে সুমনের সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে।  ফলে এখন আর রাত জেগে ফোন করা, লুকিয়ে দেখা করা, এইসব আর কিছুই নেই। খুব যে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিলাম তা নয়, জানতো প্রায় সবাই। শুধু আমরা অফিশিয়ালি কিছু ডিক্লেয়ার করিনি, ব্যাপারটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট টাইপ ছিল।

মুম্বাই চলে আসার পর মাঝেমাঝে ওর কথা মনে পড়ে। আমাদের কলেজ লাইফের প্রেম। আমার ইকোনমিক্স অনার্স ছিল, ওর কেমিস্ট্রি। প্যারামাউন্ট এর শরবত খেতে খেতে আমাকে প্রপোজ করেছিল, আমি না করিনি, হ্যাঁ বলিনি যদিও। গ্রাজুয়েশন এর পরে আমি ক্যাট দিয়ে IIMC আর ও খড়্গপুরে মাস্টার্স করতে গেল। তারপরও সম্পর্কটা টিকে ছিল যেভাবে লং ডিস্ট্যান্স রিলেশন টিকে থাকে। তারপরে একসময় বুঝলাম সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে, অনেকটা কর্তব্য পালন করার মত। সন্ধ্যেবেলার দু'ঘণ্টার ফোন কল গুলো কমতে কমতে ১০-১৫ মিনিটের হয়ে গেল। শেষমেষ সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলাম, মুম্বাইয়ের চাকরিটাও হয়ে গেল।

শত ব্যস্ততার মাঝে  মুম্বাইয়ের প্রথম এক মাস ভালই কেটে গেল। ভাড়ার ফ্ল্যাট মোটামুটি গোছানো হয়ে গেছে, যা যা  কেনার কিনে ফেলেছি। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই উইকেন্ড গুলোতে বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করলো। ঘরে বসে থাকতে বা ঘরের কাজ করতে আমার ভালো লাগেনা, আর একা একা ঘুরে বেড়ানোর কোন অভ্যাস নেই। অফিসে কোন বন্ধুও হয় নি যার সাথে উইকেন্ডে ঘোরাঘুরি করা যায়। অফিসে সমবয়সী যারা আছে তারা আমার থেকে অনেক জুনিয়ার, আর আমি যাদের সাথে কাজ করি সেই চল্লিশোর্ধ জনগণের সাথে কাজের বাইরে অন্য কোন কথা হয় না। 

কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম একা একা কোথাও ঘুরে আসি। কিছু প্ল্যানিং ও করেছিলাম,  কোথায় যাব , কি করে যাব, কোথায় থাকবো ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব প্ল্যান করতাম,  আবার ভাবতাম এত প্ল্যান করছিই বা কেন। শুক্রবার রাতে ঠিক করে অনেক উইকেন্ড ট্রিপ তো আমি করেছি। আমি জোকা থেকে গাড়ি দিয়ে যেতাম আর সুমন খড়গপুর থেকে ওর বুলেট টা নিয়ে চলে আসতো। এখানে নিজের গাড়ি নেই তো কি, ট্রেন বাস ট্যাক্সি তো আছে।

একদিন শনিবার খুব সকালবেলা ঘুম ভেঙে গেল। হঠাৎ ঠিক করলাম আজকেই যাব, এখনই যাব। ওয়েস্টার্ন ঘাটের অনেক জায়গা সম্পর্কে অনেক পড়াশুনা করেছি। ট্রেনে করেই যাবো আর কোথাও  না কোথাও থাকার জায়গা ঠিক পেয়ে যাব। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। খুব তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম, একটা অটো নিয়ে ঠানে স্টেশন আর সেখান থেকে ট্রেন। 

টিকিট না কেটে ট্রেনে উঠে পড়লাম। যথারীতি টিকিট চেকার এলেন, আমি করুণ মুখ করে বললাম টিকিট নেই।   ফাইন দিয়ে একটা টিকিটের ব্যবস্থা হয়েও গেল।  আর ভাইয়া বলে ডেকে আর অল্প হেসে একটা জানলার ধারের সিটও পেয়ে গেলাম। 'ভাইয়া' দু'একবার আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছিল বটে কিন্তু আমি তো আর খুকি নই যে তাতে কিছু মনে করব। জানলার ধার দরকার ছিল, পেয়ে গেছি।

ঘন্টা দুয়েকের ট্রেন যায়নি দেখতে দেখতে কেটে গেল। আসলে ট্রেনে করে যেতে আমার বেশ লাগে, জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখার মজাই আলাদা। 

স্টেশন থেকে বেরোনোর সাথে সাথেই হোটেলের এজেন্ট,  ক্যাব ড্রাইভাররা এগিয়ে এলেন। সাধারণত আমি এদের এড়িয়ে চলি। কিন্তু এইবার তো আর হোটেল বুক করা নেই, তাই একজন হোটেলের এজেন্টের সাথে কথা বললাম। ওনার সাথে কথা বলতে বলতে আরো দুই তিনজনে এগিয়ে এলেন। আমি সবাইকে একই কথা জিজ্ঞাসা করলাম,  হোটেল কোথায়,  রুম আছে কিনা, রুমের ভাড়া কত, ফ্যাসিলিটি কি কি আছে, ব্রেকফাস্ট ফ্রী কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। সবার কথা শুনতে শুনতে এটা বুঝে গেলাম যে কোনো না কোনো হোটেলে রুম ঠিক পেয়ে যাব।  এটা নিয়ে আর চিন্তা করার কোনো কারণ নেই ।  আমি আসার আগেই রিভিউ পড়ে দু তিনটে হোটেল সিলেক্ট করে নিয়েছিলাম। কাজেই ওনাদের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে সামনে এগিয়ে এলাম।

সামনে এগোতেই একজন এসে বললেন, বহিনজি কাহা জানা হ্যায়? আমি বললাম হোটেলে যাব, উনি জিজ্ঞাসা করলেন হোটেলে আগে থেকে ঠিক করা আছে কিনা। জানালাম যে কোনো হোটেল ঠিক করা নেই । উনি খুব খুশি হয়ে বললেন, চলুন আমার গাড়িতে চলুন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কত ভাড়া, উনি হাজার টাকা চেয়ে বসলেন। হাজার টাকা দিয়ে হোটেলে পৌঁছানোর কোনো মানেই হয় না। দরকার হলে হাজার টাকা বেশি ভাড়া দিয়ে ভালো রুমে থাকবো। অবশেষে একটা অটোওয়ালা সাথে কথা হল, উনি আমাকে আমার পছন্দের হোটেলে দিয়ে যাবেন, 200 টাকা নেবেন।  যদি হোটেল পছন্দ না হয় তখন অন্য হোটেল দিয়ে যাবেন,  কিন্তু তার জন্য আলাদা করে টাকা দিতে হবে।

যেতে যেতে অটো ড্রাইভার বললেন একটা নতুন হোটেল হয়েছে। আগে ওরা শুধু রেস্টুরেন্ট ছিল এখন থাকার রুম বানিয়েছে। আপনি একবার যেতে পারেন, খাবার খুব ভালো আর রুম পছন্দ না হলে অন্য জায়গায় চলে যাবেন। সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে খিদে খিদে পাচ্ছিল আর খাবার খুব ভালো শুনে মনে হল যাই একবার।

হোটেলটায় ঢোকার মুখেই  রেস্টুরেন্ট আর পেছনের দিকে থাকার জায়গা। রেস্টুরেন্ট বাইরেও বসার জায়গা আছে আর ভেতরে এসিতেও বসা যায়। 

রেস্টুরেন্ট দেখে খিদে বেড়ে গেল আর অটো ড্রাইভারকে বললাম আগে খেয়ে নি, পরে রুম দেখা যাবে। উনি শুনে বললে যে দেরি হয়ে যাবে, আপনি আগে হোটেল দেখে নিন কিন্তু শেষমেষ রাজি হয়ে গেলেন। ওনাকে বললাম আপনিও আমার সাথে বসে খেয়ে নিন। উনি প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না, দুবার বলতে রাজি হয়ে গেলেন। 

খাবার অর্ডার দিয়ে ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে কি কি দেখার জায়গা আছে? কতক্ষণ সময় লাগে অটোতে আর উনি কত ভাড়া নেবেন। ভাড়া উনি ঠিকঠাকই বললেন। মনে মনে ঠিক করে দিয়েছিলাম ওনার অটোতেই যাব, কিন্তু কিছু বলিনি। 

আলুর পরোটা খেতে খেতে হঠাৎ খেয়াল করলাম ভদ্রলোক বারবার আমার বুকের দিকে তাকাচ্ছেন। বাইরে বসে গরমে কখন যে উইন্ডচিটারের চেন নামিয়ে দিয়েছি সেটার খেয়াল নেই আর উনি এই সুযোগের পুরো সদ্ব্যবহার করছেন। মাথাটা এত গরম হয়ে গেল যে আর কি বলব। কিছু কিছু লোকের এই একটা দোষ , আপনি তার সাথে যত ভালো ব্যবহারই করুন না কেন, সে ঠিক আপনার বুকের দিকে তাকাবেই। 

খাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে ওয়েটারকে জিজ্ঞাসা করলাম রুমের জন্য কোথায় কথা বলব। ওয়েটার জানালো যে রেস্টুরেন্টের ক্যাশ কাউন্টারে  রুমের জন্য কথা বলতে হয়।  যিনি বুকিং দিচ্ছিলেম উনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলেন সঙ্গে কে আছে। কেন বাবা একটা একা একা মেয়ে কি ঘুরতে পারে না ! আর আমি তো আর বাচ্চা মেয়ে নই, ২৫ বছর বয়স হয়ে গেছে। যাইহোক আমার একা থাকা নিয়ে কোন সমস্যা হলো না আর উনি আমাকে জানালেন রুম আছে।  আবার পরের প্রশ্নই ছিল ঘুরতে যাওয়ার জন্য হোটেল থেকে গাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে কিনা। ওনারা বললেন যে হোটেলের গাড়ি আছে,  এছাড়াও দরকার হলে ওনারা বাইরে থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবেন। পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা অটো ড্রাইভার যে খুশি হচ্ছেন না বুঝতে পারছি। বেশ হয়েছে, আরো তাকা আমার দিকে।

হোটেলের রুম যেটা দেখালো সেটা খারাপ না। রুমে ঢুকলেই একটা ওয়ারড্রব, পাশে দুটো চেয়ার একটা টেবিল আর একটা কুইন সাইজ বেড। আমার একার জন্য যথেষ্ট। রুমের ভাড়াও একটু কম, হয়তো নতুন খুলেছে বলেই। রুম বুক করে ড্রাইভারকে ২০০ টাকা দিয়ে ছেড়ে দিলাম।

রুমে ফিরে সুমনের কথা মনে পড়ছিল। এইসব রুম বুকিং ওর দায়িত্ব ছিল। এমন একটা ভাব করত যেন বুকিং করা কত সাংঘাতিক কাজ। আর রুমে ঢুকে পড়ে আসল কাজ শুরু করে দিত। সুমনের সাথে উইকেন্ডে বেড়াতে গিয়ে একবার হোটেলে ঢুকে পড়লেই হল। তারপরে বাবুকে ভেতরে ঢুকতে দিতে হবে। এখন এখন তো আর সেসব  কিছুই নেই। শেষ কয়েক মাসে জীবন কেমন পাল্টে গেছে।

এইসব চাইপাশ ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ অটো ড্রাইভারটার কথা মনে পড়ল। কিরকম নির্লজ্জের মত তাকাচ্ছিল। বাকি সব মেয়েদের মত আমিও লোকজনের তাকানোর সাথে অভ্যস্ত, কিন্তু এরকম নির্লজ্জের মত কেউ তাকালে একটা অস্বস্তি হয়, রাগও হয়। আমি না হয় এখন উপসী,  তোদের তো স্বভাব দোষ।

রেস্ট নিয়ে রেডি হতে একটু দেরী হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি রিসিপশনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম গাড়ি রেডি তো? উনারা বললেন আপনিতো গাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কিছু তো কনফার্ম করে যান নি। উনারা বললেন গাড়ির ব্যবস্থা ওরা করে দেবেন কিন্তু একটু দেরি হবে। পাশে একটা সদ্য বিবাহিত কাপেল গাড়ির রেট নিয়ে খুব দরদাম করছিল। কাউন্টারের ভদ্রলোক বললেন আপনারা একটা গাড়িতে চলে যান না,  রেট একটু কম পড়বে আর তাড়াতাড়ি গাড়িও পেয়ে যাবেন।

রেট নিয়ে আমার কোন সমস্যা ছিল না, আর অন্য কারো সাথে গাড়ি শেয়ার করার ইচ্ছেও ছিল না। কিন্তু পরে ভাবলাম একে তো দেরি হয়ে গেছে, গাড়ি পেতে আরো কত দেরি হবে তার কোন ঠিক নেই। একা একা গেলে সেই লোক কেমন হবে কে জানে, এর চেয়ে ভালো এদের সাথেই যাই।

গাড়িতে আমি আর বউটা পেছনে বসলাম আর বরটা সামনে ড্রাইভারের পাশে বসলেন। ওদের একটাই সমস্যা, একটু পরে পরেই গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলার জন্য নেমে পরে। ড্রাইভার একটু বিরক্ত হচ্ছিলেন কিন্তু আমার ভালই লাগছিল। তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে টুরিস্ট স্পটে পৌঁছে ভিড়ের মধ্যে একশটা ছবি তোলার থেকে, ওরা যে জার্নিটা এনজয় করছে সেটাই ভালো। আমিও ওদের কিছু ছবি তুলে দিলাম। 

গন্ডগোল বাঁধলো ফেরার সময়। ঘুরতে এবং খেতে আমাদের বেশ কিছু সময় লেগেছে তাই ফেরার সময় ড্রাইভার একটু স্পিডেই গাড়িটা চালাতে শুরু করল। হঠাৎ বউটা বলে গাড়ি থামাও। আমি ভাবলাম হয়তো আবার ছবি তুলবে, কিন্তু কিছু ভাবার আগেই গাড়ির মধ্যে হরহর করে বমি করে দিল।

আমি ড্রাইভার কে বললাম গাড়িটা দাঁড় করান, উনি একটু রেস্ট নিক, আপনি গাড়ির ভেতরটা একটু পরিষ্কার করে দিন। তারপরে আস্তে আস্তে গাড়ি চালান।

এইসব এইসব করতে করতে প্রায় ১৫-২০ মিনিট চলে গেল। আমি গাড়িতে উঠে দেখলাম ভেতরটা পরিষ্কার হয়েছে বটে কিন্তু বমির গন্ধ বের হচ্ছে। কিছু বললাম না কারণ কিই বা করার আছে। ড্রাইভার আবার গাড়ি স্টার্ট করলেন, স্টার্ট করার সাথে সাথে আবার বমি। এবারও গাড়ির ভেতরে আর কিছুটা আবার আমার উইন্ডচিটারের হাতায় পড়ল।

এইবার ড্রাইভার দেখলাম বেশ রেগে গেলেন। উনি সঙ্গে সঙ্গে হোটেলে ফোন করে বললেন যে প্যাসেঞ্জার শুধু বমি করছে, গাড়ি একদম নোংরা হয়ে গেছে, ফিরতে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে।  হোটেল থেকে বলল আরেকটা গাড়ি আসছে, বমির ওষুধ দিয়ে আসছে,  চিন্তা করার কোন কারণ নেই। পেসেঞ্জাররা রেস্ট নিক, কোনো অসুবিধা হবে না। 

আরেকটা গাড়ি আসছে শুনে আমি বেশ খুশি হলাম। বমির গন্ধে আমার নিজেরও অস্বস্তি হচ্ছিল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন নতুন গাড়ি আসবে। তখন সূর্যাস্ত হচ্ছে, বাইরেটাকে দেখতেও খুব ভালো লাগছিল। বরটাকে দেখলাম খুব আদর করে বউটার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। 

গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি হঠাৎ দেখে আমাদের গাড়ির সামনে একটা বাইক এসে থামল। ওনাকে চেনা চেনা লাগছে তারপর মনে পড়ল কাউন্টারে উনি বসে ছিলেন কারো সাথে কথা বলছিলেন। উনি  এসে ওষুধ দিলেন তার পরে আমাকে বললেন আপনি বরং আমার সাথে বাইকে চলুন। অচেনা লোকের সাথে বাইকে যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু গাড়িতে বমির গন্ধ, আবার যে বমি করবে না তারও নিশ্চয়তা দিই। বরটাও বলল , দিদিভাই আপনি কিছু মনে না করলে বাইকে চলে যান। আমাদের জন্য আপনাকে এই  বিরম্বনায় পরতে হলো। শেষমেশ  ঠিক হলো আমি বাইকেই যাব,  গাড়ি আর বাইক একসাথে চলবে এবং গাড়িটাকে বলা হলো খুব আস্তে আস্তে চালাতে।

বাইকের পেছনে উঠে বসলাম। কেমন একটা অদ্ভুত লাগছিল। বাইক চলতে শুরু করল, উনি খুব আস্তে আস্তেই বাইক চালাচ্ছিলেন। কেউই কারো সাথে কথা বলছিলাম না, কথা কি বলবো কেউ তো কাউকে চিনি না। 

আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কি হোটেলের ম্যানেজার? উনি হেসে বললেন না না আমি এই হোটেলের ইনভেস্টার।  উইকেন্ডে আসি, এছাড়া আমি জব করি। উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি করি? আমি বললাম আমি এমবিএ শেষ করে জব করছি। উনি বললেন যে উনিও ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করে জোকা থেকে এমবিএ করেছেন। আমিতো জোকা শুনে খুশি হয়ে গেলাম, বললাম আমিও তো জোকা। যাক বেড়াতে এসে জোকার একজন সিনিয়ারের সাথে দেখা হয়ে গেল। উনি বললেন যে আমি কিন্তু তোমার থেকে অনেকটাই সিনিয়ার। কোন ইয়ারে পাস করেছে সেটাও বললেন। আমি মনে মনে হিসাব করলাম, উনি আমার থেকে 16 বছর আগে পাশ করেছেন আর ইঞ্জিনিয়ারিং করতে এক বছর বেশি লাগে। উনি আমার থেকে প্রায় ১৭-১৮ বছরের বয়সে বড়।

ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম স্যার আপনার নাম কি। উনি বললেন আমার নাম রাজেশ আর এতক্ষণ যখন স্যার বলে ডাকো নি, তখন আর স্যার বলতে হবে না। তুমি তো বাঙালি, তুমি আমাকে রাজেশদা বলেই ডাকো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আমি বাঙালি বুঝলেন কি করে? আমার হিন্দি উচ্চারণ শুনে? রাজেশদা হেসে বলল  তোমার হিন্দি উচ্চারণ বেশ ভালো। প্রশংসা কার না ভালো লাগে, রাজেশদা বললোও বেশ বিশ্বাসযোগ্য করে।

অবশেষে আমরা হোটেলে পৌঁছলাম। ওদের গাড়িটাও আমাদের সাথে সাথেই পৌঁছল। বউটাকে দেখে মনে হল একটু ভালো আছে। ওরা ওদের ঘরে চলে গেল। আমি রাজেশদা কে ধন্যবাদ জানালাম আর হ্যান্ডসেক করলাম। রাজেশদা বলল, অতসী  ইভিনিং স্ন্যাক্স তুমি ঘরেও খেতে পারো বা বাইরে এসেও খেতে পারো। আমি বললাম ঠিক আছে। আমি  ঘরে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে অর্ডার করছি। রাজেশ দা বলল অর্ডার করে দিও, খাবার রেডি হতে হতে কিন্তু আধঘন্টা লাগিয়ে দেবে। আমি বললাম ঠিক আছে, আমি তাড়াতাড়ি অর্ডার করে দেব। রাজেশদা তো তখনও আমার হাত ধরে আছে। আমি একটু হেসে এবার হাতটা ছাড়িয়ে দিলাম, রাজেশদাও একটু হাসলো। আমি রাজেশদাকে টাটা বলে খুশি মনে নিজের রুমে চলে এলাম।

রাজেশদা বেশ স্মার্ট। চাকরি করে সাথে একটা ব্যবসা খুলেছে , কথাবার্তাও খুব ভালো। আমার ডান হাতটা তো এখনো গরম হয়ে আছে।

রুমে ঢুকেই প্রথমে স্নান করলাম। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল। বমি পর্ব বাদ দিয়ে আজকের ঘোরাটা বেশ ভালই হয়েছে। এই জায়গাটা সত্যিই সুন্দর, আর আমার একটা ছুটির দরকার ছিল। 

স্নানের পর খাবার অর্ডার করতে গিয়ে দেখি রুমের ইন্টারকম কাজ করছে না। তার মানে তো খাবার অর্ডার দিতে বাইরে যেতে হবে। ইস রুমে ঢোকার আগে যদি খাবারটা অর্ডার দিয়ে দিতাম তাহলে এতক্ষণে খাবার রেডি হয়ে যেত। নিজের বোকামিতে নিজের উপরই রাগ হলো। কিন্তু কি আর করা যাবে, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে খাবার জন্য বাইরে চলে এলাম।

বাইরে বেরিয়ে দেখি রেস্টুরেন্টে বেশ ভালো ভিড়। আর রেস্টুরেন্টের কোণের দিকের একটা টেবিলে রাজেশদা একা একা বসে আছে।  আমি রাজেশদার টেবিলের পাশে গিয়ে বললাম, রাজেশ দা খুব খিদে পেয়েছে। খাবার অর্ডার এখনো করা হয়নি। তাড়াতাড়ি কি হবে গো?

রাজেশ দা বলল  আমি চিকেন পকোড়া অর্ডার করেছি, আমারটা এক্ষুনি এসে যাবে। দুজনে মিলে খেতে শুরু করি আর তুমি কিছু একটা অর্ডার করে দাও।  পকোড়া খেতে খেতে ওটা এসে যাবে। 

খিদেও পেয়েছিল তাই আর কিছু না ভেবে  রাজেশদার পাশে গিয়ে বসে পড়লাম। পকোড়া খেতে খেতে রাজেশদা জিজ্ঞাসা করল, অতসী বিয়ার খাবে? আমিও দিব্যি বলে দিলাম যে আমি বিয়ার খাই না। রাজেশদা আমার দিকে তাকিয়ে মিচকি হেসে বলে সত্যি? আমিও বললাম কেন বিশ্বাস হচ্ছে না? রাজেশদা বলল একদম না, কাঁচা ঢপ মারছো।  আমি  হেসে বল্লাম আসলে সত্যি বলতে কি, খুব অল্প কিছু পছন্দের লোকের সাথে বসলেই খাই। না হলে খাই না। রাজেশদা বলল আমিও তাই। লোকজন পছন্দ না হলে দরকার ছাড়া কথাই বলি না তো বিয়ার খাওয়া। এই বলে একটা ওয়েটারকে ডেকে বললো  দুটো বিয়ার দিয়ে যেতে। আমি হেসে ফেললাম কিন্তু আর না করলাম না। বাইরে ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে, উইন্ডচিটারে বউটা বমি করে দেওয়ার পরে সেটা আর পরিনি, একটু বিয়ার ভালই লাগবে। 

বিয়ার খেতে খেতে রাজেশ দা জিজ্ঞাসা করল ,অতসী হঠাৎ একা একা ঘুরতে বেরিয়েছো,  কি ব্যাপার? তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না যে তুমি একা একা ঘুরে বেড়াও। আমি এই প্রসঙ্গে কোনো কিছু বলতে আগ্রহী ছিলাম না। তাই শুধু বললাম মুম্বাইতে নতুন চাকরি নিয়ে এসেছি,  ভাবলাম একটু আশেপাশের জায়গাগুলো ঘুরে দেখি। রাজেশদা যাতে এই ব্যাপারে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে তাই আমি বললাম রাজেশ দা, তুমি হঠাৎ এই হোটেলে কি করে আর কেন ইনভেস্ট করলে? রাজেশ দা বলল ২০০৮ সালের রেসেশনের সময় রাজেশ দা অনসাইটে পোস্টিং ছিল। রেসেশনের সময়  প্রচুর লোকের চাকরি চলে যায় আর রাজেশদাদের আবার দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। পরপর দু'বছর কোনো ইনক্রিমেন্ট পায়নি। সেই থেকেই  ঠিক করে নিয়েছিল যে চাকরির বাইরে কিছু একটা উপার্জনের জায়গা তৈরি করতেই হবে। তারপর থেকেই এই বিজনেস ওই বিজনেস করতে করতে অবশেষে এই হোটেল। রেস্টুরেন্ট আগে থেকেই ছিল আর পেছনের দিকটা ফাঁকাই ছিল। এই জমিতে যে রুম হয়েছে তার সব খরচটা দিয়েছে রাজেশদা দিয়েছে। পার্টনারশিপের ব্যবসা, প্রফিট শেয়ারিং হয়।

আমি বললাম নতুন করেই যখন ঘর করেছো, আরো কিছু ফ্যাসিলিটি দিতে পারতে। বাথরুমে হেয়ার ড্রায়ার নেই, তোমার রুমের ইন্টারকম কাজ করে না, এইসব কেন? রাজেশ দা বললে ইন্টারকম দিব্যি কাজ করে, হয়তো  তারটা খোলা আছে, পেছনে গুঁজে দিলেই কাজ করতো। আমি বলে বসলাম পিছনে গোঁজা কি আমার কাজ নাকি? রাজেশ দা মিচকি হেসে বলল না অতসী, ওটা আমার কাজ, আমি রাতে তোমার রুমে গিয়ে গুঁজে দেবো । আমি বুঝতে পারলাম কি বলেছে, কিন্তু কোন উত্তর দিলাম না। 

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে রাজেশ দা বলল, তোমার ক্যারিয়ার প্ল্যান কি? আমি বললাম কোন প্ল্যান নেই,  ছোটবেলায় পড়তে হবে তাই পড়েছি। গ্রাজুয়েশন করতে করতে বুঝতে পারলাম যে এমবিএ করলে ভালো প্রসপেক্ট আছে, এমবিএ করে নিলাম। অংকে আরেকটু ভালো হলে হয়তো রিসার্চে যেতাম, কিন্তু মনে হলো যে এমবিএ টাই সহজ হবে। রাজেশদা নাকি অঙ্কে ভালই ছিল,  নিজের ইচ্ছেও ছিল যে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করবে।  কিন্তু ক্লাস টুয়েলভে প্রেম করতে শুরু করে, আর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে তাড়াতাড়ি চাকরি পেয়ে যাবে। সেই জন্য অংকে অনার্স না পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়ে যায়।

আমি হেসে বললাম, আরব্বাস ক্লাস টুয়েলভ থেকে প্রেম করছো! রাজেশ দা হেসে বললো ক্লাস ৮ থেকে করছি, ১২  এর টা সিরিয়াস। আর আমাকে দুম করে জিজ্ঞাসা করে বসলো তুমি কবে থেকে করছ? আমিও কিছু না ভেবে উত্তর দিয়ে দিলাম কলেজ থেকে।  এক মুহূর্ত থেমে জিজ্ঞাসা করল সদ্য ব্রেকআপ হয়েছে? আমি বললাম না, বেশ কিছু মাস হয়ে গেছে। 

রাজেশ দা আমাকে বলল যে রাজেশ দা বিয়ার রিপিট করবে, আমি বললাম আমিও। 

গ্লাসে বিয়ার ঢালতে ঢালতে ভাবছিলাম যে এই লোকটাকে ঘন্টাখানেক আগেও চিনতাম না, এখন বসে দিব্যি কেমন গল্প করছি। বিয়ার খেতে খেতে খেয়াল করলাম,  রাজেশদা আমার সাথে গল্প করছে বটে কিন্তু আশেপাশের সব টেবিলের দিকে নজর রাখছে। রাজেশদা কে জিজ্ঞাসা করলাম রাজেশদা, তুমি খেয়াল করছো না সব টেবিলে খাবার ঠিকমত আসছে কিনা?  রাজেশ দা বলল খাবার ঠিক মতো আসছে কিনা সেটা তো  দেখছি না , শুধু খেয়াল রাখছি লোকজন খুশি কিনা। তারপরে আবার দিকে তাকিয়ে,  একটা ফিচেল হাসি হেসে জিজ্ঞাসা করল অতসী তুমি খুশি তো? আমি কোন উত্তর না দিয়ে হেসে দিলাম।

বিয়ার খেতে খেতে রাজেশদা কে বললাম রাজেশ দা, আরেকটা সাইডডিশ কিছু লাগবে তো। রাজেশদা বলল,  বেবি এবার তুমি  ডিনারের অর্ডার দিয়ে দাও।  আমি রাজেশদা কে বললাম, এই তুমি আমাকে বেবি বলে ডাকলে কেন? রাজেশদা বলল,  আরে তুমি তো একটা ছোট্ট বেবির মতো , বলে একটা হাত দিয়ে আমার গাল দুটোকে টিপে দিল।

আমি অল্প রেগেই বললাম, তুই বড্ড অসভ্য রাজেশদা । তোমার মনে হয় নেশা হয়ে গেছে। রাজেশদা হাহা করে হেসে বলল, দু বোতল বিয়ার খেয়ে কারো আবার নেশা হয় নাকি। তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে রাজেশ দা বলল, তুমি সত্যি খুব সুন্দর অতসী। তোমার সাথে লাস ভেগাসেও যাওয়া যায়, আবার লাইব্রেরীতেও বসা যায়।  এরকম অদ্ভুত প্রশংসা কেউ কখনো আমার করেনি।  আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, না না আমি আর ডিনার করবো না তুমি কিছু অর্ডার দিয়ে দাও।

আমি মনে মনে ভাবছি যে লোকটা কি চায়। আমার থেকে এতটা বড়, এমনিতে ভালো ব্যবহার করছে কিন্তু আবার গালটাও টিপে দিল। ঘরের ইন্টারকম নিয়ে এমন একটা মন্তব্য করল যার অন্য  রকম মানেও হতে পারে। অথচ লোকটার উপর আমার যতটা বিরক্তি বা রাগ হওয়া উচিত, সেটা তো হচ্ছে না। আমি ঠিক করলাম আমি আর বিয়ার খাব না। আরেকটা কিছু খাবার এলে সেটা খেয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়বো।।

এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দেখি সেই সদ্য বিবাহিত যুগল খেতে এসেছে। আমি ডাকতে যাব রাজেশ দা ফিসফিস করে বলল ডেকো না। আমি রাজেশ দা কে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলাম কেন? রাজেশ দা মিচকি হেসে বলল ওরা হানিমুন কাপেল, ওদেরকে একটু স্পেস দাও। তাও আমি হাত তুলে ডাকলাম।  দেখলাম বরটা একাই এগিয়ে এলো। রাজেশদাই জিজ্ঞাসা করল যে বউটা কেমন আছে, আর কোন সমস্যা হয়েছে কিনা? বরটা বলল সব ঠিক আছে। তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বলে বিয়ার খাচ্ছেন? আপনাদের দুজনের তো ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে দেখছি। আমি কিছু একটা বাজে উত্তর দিতে যাব তখন রাজেশ দা একটা হাত দিয়ে আমার থাই চেপে ধরল। আমি বুঝলাম কিছু বলতে বারণ করছে।

বরটা চলে গেলে আমি রাজেশদা কে বললাম যতসব ফালতু লোকজন, কিছু একটা উত্তর দিয়ে দেয়া উচিত ছিল। রাজেশদা বলল অতসী, এই জন্যই তো তোমাকে আমি ওদেরকে ডাকতে না বলেছিলাম। আমি বললাম যে কি করে বুঝবো একটা ফালতু লোক। কি যে ভাবছে আমাদের সম্পর্কে কে জানে। রাজেশ দা খুব একটা নিষ্পাপ মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কি মনে হয় অতসী, ওরা কি ভাবছে আমাদের সম্পর্কে? লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেল, আমি কিছু উত্তর দিতে পারলাম না। দুষ্টু রাজেশটা ঠোঁটের কোণায় অল্প হাসি নিয়ে স্বাভাবিক মুখ করে বসে রইল।

বিয়ার খেতে খেতে রাজেশ দা বলল, ডার্লিং একটু বসো, আমি এক্ষুনি কিচেন থেকে ঘুরে তোমার কাছে ফিরে আসছি।। আমি বললাম রাজেশ দা, তুমি আবার আমাকে এসব ভুলভাল নাম ধরে ডাকছো। 

রাজেশদা বললো বেবি বলে ডাকলে আপত্তি, ডার্লিং ও বলবো না, সুইটহার্ট বললেও হয়তো আপত্তি করবে,  তাহলে কি পছন্দ বলো, জানু না হানি। আমি রাজেশদার থাইতে একটা চাটি মেরে বললাম আবার তুমি দুষ্টুমি আরম্ভ করেছো! 

রাজেশদা আমার হাতটা ধরে নিয়ে বলল অতসী,  দুষ্টুমি বলতে আমি কিন্তু অন্য কিছু বুঝি। আমি বললাম থাক, তোমাকে আর সেটা বলতে হবে না। রাজেশদা বলল বলব কেন, আমরা দুজনে মিলে করবো। আমি বললাম ছিঃ, ছাড়ো আমার হাত। রাজেশদা আমার হাতটা জোরে চেপে ছেড়ে দিয়ে হেসে উঠে চলে গেল।

আমি একা একা বসে ভাবছি কি হচ্ছে। লোকটা আমার সাথে ফ্লার্ট করছে আর আমি হ্যাঁ হ্যাঁ করছি। হ্যাঁ হ্যাঁ করে হাসছো যদিও না, কিন্তু লোকটাকে তো থামাচ্ছিও না। এরপর যদি রাজেশদা ধরে নেয় যে আমার দিক থেকে কোন আপত্তি নেই, তাহলে তো রাজেশদা কে পুরো দোষ দেওয়া যাবে না। না না, এসব ঠিক হচ্ছে না। রাজেশদা আমার থেকে ১৭-১৮ বছরের বড়। মানে আমি যখন জন্মেছি তখন রাজেশদা ক্লাস ১১-১২এ,  আমার মায়ের বয়সী মহিলাদের বৌদি বলে ডাকত আর এখন আমার সাথে ফ্লার্ট করছে! ৪-৫ বছর বড় হলে তাও ভেবে দেখা যেত।  লোকটা এমনিতে মন্দ না, বেশ ইন্টারেস্টিং। 

একটু পরে রাজেশদা আবার আমার পাশে বসলো। আমি তো মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি, এবার ফ্লাটিং করলে আমি কিছু একটা বলে দেবো আর উঠে চলে আসবো। রাজেশদা এসে বলল, অতসী কিচেনটা একবার ঘুরে দেখে এলাম। আমাকে জিজ্ঞাসা করল আমার এই রেস্টুরেন্টের খাবার কেমন লেগেছে? আমি বললাম খাবার বেশ ভালো কিন্তু অপশন কম।  রাজেশদা বলল অপশন বেশি রাখলে কাঁচামাল ওয়েস্ট বেশি হয়, আর বিক্রি কিন্তু অল্প কিছু আইটেমই বেশি হয়। ফলে আইটেম বাড়াতে হলে বেশি বিক্রি হওয়ার জিনিসগুলোর দাম বাড়াতে হবে। আর সেটা এখন আমরা করতে চাইছি না। আমি রাজেশদা কে খাবারের দাম কি করে ঠিক হয়, রুমের ভাড়া কি করে ঠিক হয় এইসব জিজ্ঞাসা করলাম আর এইসব আলোচনা করতে করতেই আমাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেল। আমি খেয়াল করলাম যে রাজেশদা ফ্লার্ট করে, তারপর একটা অন্য ডিসকাশনে চলে যায়,  আবার খানিকক্ষণ পরে কিছু একটা করে।

খাওয়া শেষ হবার পরে রাজেশদা বলল আতসী চলো একটু হেঁটে আসি, তোমাকে একটা ভালো স্পট দেখাই। আমি বললাম এত রাতে কোথায় হাঁটতে যাব! রাজেশদা বলল নটাও বাজেনি আর আমরা দূরে কোথাও যাচ্ছি না, ১০ মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসব। রাজেশদার সাথে কিচেনের পাশের রাস্তা দিয়ে একটা জায়গায় এলাম। জায়গাটা হোটেল থেকে দশ মিনিটও দূরে না।।  দেখলাম সামনে একটা খাদের মত আর সেখানে দিয়ে একটা সরু জলধারা বয়ে চলেছে। চাঁদের আলোয় জায়গাটা আরো সুন্দর লাগছে। দুজনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে জায়গাটা দেখতে লাগলাম। আমি মোবাইল বের করে দু তিনটে ছবিও তুললাম , কিন্তু ছবিতে জায়গাটা কত ভালো সেটা বোঝা যাচ্ছে না। 

রাজেশদা কে বললাম রাজেশ দা, আমার ফোনটা নিয়ে আমার দুটো তিনটে ছবি তুলে দেবে? পুরো রেঞ্জটা সমেত ছবি নিও। রাজেশদা আমার দু তিনটে ছবি তুলে দিল কিন্তু অন্ধকারে আমাকে ভালো বোঝাই যাচ্ছে।  রাজেশদা বলল দাঁড়াও, আমার ফোনে এর থেকে ভালো ছবি ওঠে।  রাজেশদা আমার কয়েকটা ছবি তুলে দেওয়ার পরে আমি রাজেশদা কে বললাম আমি কি তোমার ছবি তুলে দেবো? রাজেশ দা বলল সেলফিই তুলি, আমার যা চেহারা আর গায়ের রং, দূর থেকে ছবি তুললে অন্ধকারে বোঝাই যাবে না। আমি ফট করে বলে বসলাম,  কি যে বল রাজেশ দা তোমাকে দেখতে বেশ ভালো। বলেই ভাবলাম কি ভুল করলাম, এবার নিশ্চয়ই কিছু একটা কমেন্ট করবে।  রাজেশদা শুধু মিষ্টি এসে থ্যাংক ইউ বলল,  কোন উল্টোপাল্টা কমেন্ট করলো না।

পরের অংশ >

মন্তব্যসমূহ

জনপ্রিয় গল্প

বিবাহিতা বড় বোনের জন্য

এই গল্পটা আমাদের লিখে পাঠিয়েছেন “মৌসুমি তামান্না চম্পা”। আমরা তার মত করেই গল্পটা শেয়ার করছি। -------------------------------------------------------------- সময়টা ১৯৯৬ সালের শুরুর দিকে। ঢাকার শ্যামলীতে একটা ফ্ল্যাটে থাকি আমি আর আমার বিবাহিতা বড় বোন   চম্পা। আমার নাম রাসেল। চাকুরী সুত্রে দুলাভাই গত পাঁচ বছর যাবত দুবাই প্রবাসী। বছরে দুবার সপ্তাহ দুয়েকের জন্য দেশে আসে দুলাভাই , ঐ সময়টুকু বাদ দিলে বাসায় লোক বলতে শুধু আপু আর আমি। কাজের মহিলা দিনের একবেলা আসে কাজ শেষে চলে যায়। আপুকে দেখাশোনার দায়িত্ব পালনের জন্য বাবা আমাকে তখন ঢাকায় গুলশান তিতুমীর কলেজে ইংলিশে অনার্স ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন। আমার বয়স তখন ২০ , চম্পার বয়স ৩১। আপুর কোনো বাচ্চাকাচ্চা হয়নি তখনো। আপু দেখতে অনেকটা টেলিভিশন নায়িকা শমী কায়সারের মতোই। গায়ের ত্বক দুধের মতো ফর্সা মাঝারি গঠনের শরীর , ভরাট ডবকা তারপুরার মতো পাছা , ফোলা ফোলা স্তন , লম্বায় ৫ ' ৪"। আপুর থাই , পাছা চওয়া হওয়ার কারনে হাইটের তুলনায় আপুকে আরো লম্বা দেখায়। রাস্তায় চলাফেরার সময় ভড়াট পাছার ঢেউ রাস্তার ছেলে বুড়ো সবাইকে পাগল করে দিত। চম্পার ফর্স...

বউকে পরপুরুষের সাথে দেখার ইচ্ছাপূরণ

এই গল্পটি আমাদের লিখে পাঠিয়েছেন “মৌসুমি তামান্না চম্পা” । আমরা তার পাঠানো গল্পটি তার মতো করেই শেয়ার করছি। ============================================= আমি একজন ৩৯ বছরের বাঙালী পুরুষ। আমার স্ত্রী চম্পার বয়স ৩২ বছর। আমাদের ৬ বছরের একটা মেয়ে আছে। চম্পা বিয়ের আগে থেকেই বেশ ফিগার সচেতন, নিয়মিত যোগ ব্যায়াম করে। ওর ফিগার এখন  ৩৭-৩০-৩৯, বেশ লোভনীয় ফিগার যেকোনো পুরুষের জন্য। আমার বহুদিনের সুপ্ত বাসনা যে আমার স্ত্রীকে অন্য পুরুষ চুদবে আর আমি সেটা দেখবো। কিন্তু চম্পাকে কখনো ইচ্ছার কথাটা বলার সাহস পাইনি। একদিন হঠাৎ করেই সেই ইচ্ছাটা পুরন হয়ে গেলো। আমি ও আমার বৌ বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানেই আমার অনেকদিনের ইচ্ছাটা পুরন হয়ে যায়। কয়েক মাস এক নাগাড়ে অফিসের কাজ করে হাপিয়ে উঠেছি। মেয়ের পরীক্ষা শেষ, সে খালা বাড়িতে বেড়াতে গেছে। ভাবলাম এই সুযোগে আমি ও চম্পা কিছুদিনের জন্য কোথাও থেকে বেরিয়ে আসি। চম্পাকে বলতেই আনন্দে লাফিয়ে উঠলো। অফিস থেকে ৬ দিনের ছুটি নিয়ে কুয়াকাটা সমুদ্রের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সেখানে পৌছে কোন হোটেলেই রুম পেলাম না। ফিরে যাবো কিনা ভাবছি এমন সময় একটা হোটেলের ম্যানেজার বললো, সৈকত বেশ কিছু দূরে...

বাঙালি বধূর বিদেশীর কাছে চুদা খাওয়া

আমার নাম তুশি সারোয়ার। আমি বাংলাদেশি, তবে বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় থাকি কারণ আমার স্বামী আলম সারোয়ার সিডনীতে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে জব করেন। আমি, আমার স্বামী, আর আমাদের ৪ বছরের ছোট্ট সন্তান এই নিয়ে সিডনীর একটি এপার্টমেন্টে আমাদের ছোট্ট সুখের সংসার। আমদের বিয়ে হয়েছে ৬ বছর হল। বিয়ের পরই আমার শ্বশুর-শাশুড়ি অস্ট্রেলিয়ায় চলে আসতে বলেছিলেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল এটা ঠিক হবেনা। কারণ আমার শ্বশুর-শাশুড়ির একমাত্র ছেলের বউ আমি। বিয়ের পরপরই যদি চলে আসি সেটা খারাপ দেখায়। তাই আমি বিয়ের পর ৪ বছর বাংলাদেশেই শ্বশুর-শাশুরির সাথে ছিলাম। আলম এসময় অস্ট্রেলিয়ায় ছিল। তবে ও ছুটি পেলেই বাংলাদেশে চলে যেত। আমার শ্বশুর-শাশুড়ি আমাকে খুবই ভালবাসেন, কারণ তাদের কোনো মেয়ে নেই। আমার স্বামীই তাদের একমাত্র সন্তান। তাঁরা বলেন যে আমাকে পেয়ে নাকি তাদের মেয়ের অভাব ঘুচে গেছে। আমার স্বামী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্বামী। আমাকে ও খুব ভালবাসে। আমিও ওকে খুব ভালবাসি। আমি যখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি তখন আলমের সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়। আলম তখন বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে জব করছে অস্ট্রেলিয়ায়। অবশ্য এর আগে বাংলাদেশে দু’ বছর জব করেছে। আলমদ...

গৃহবধু ও বাড়ির দারোয়ান

 আমার নাম সমরিতা, ২৬ বছর বয়স এবং ঢাকায় বসবাস করি। আমি বিয়ে হয়েছে ২ বছর আগে এবং এখন পর্যন্ত কোন সন্তানাদি হয়নি। গায়ের রঙ মাঝারি আর শরিরের গঠন ৩২-২৬-২৫। রাস্তায় বেরোলে অনেকে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। এইটা আমার প্রথম গল্প ”নাভেলস্টোরিজ” এ, তাই যদি কিছু ভুল হয় আমায় ক্ষমা করে দেবেন। যাক এখন মূল গল্পে ফেরা যাক। এইটা একটি সত্যি ঘটনা যা এক বছর আগে ঘটেছিল। আমার স্বামী সফ্টওয়ার ইন্জিনীয়ার আর আমাদের বিবাহিত জীবন ভালই কাটছিল। এই ঘটনাটা বিয়ের এক বছর পরেই ঘটে। আমাদের যৌন জীবন বেশ সুখেই কাটছিল এবং আমি তাকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম। কিন্তু দুরভাগ্য আমার, বিয়ের ছয় মাস পর আমার স্বামিকে এক বছরের জন্য আমেরিকা যেতে হোলও কোম্পানির কাজে। ভিসা না পাওয়ার জন্য আমার যাওয়া হোল না। প্রথম প্রথম সেরকম কোন অসুবিধা না হলেও কয়েক মাস যেতে না যেতেই একাকিত্ত আমায় কুরে কুরে খেতে লাগল, আর তাই চাকরির খোজ করতে লাগলাম। কিন্তু আজকাল চাকরির যা বাজার সহজে কি আর পাওয়া যায়। যৌন সুখ থেকে বঞ্ছিত হওয়ার দুঃখও আমায় কস্ট দিতে লাগল। প্রথম প্রথম আমরা অনলাইন চ্যাট করতাম স্কাইপিতেও কল করতাম কিন্তু অর কাজের চাপ বাড়ার জন্য সে ব্যস্ত হয়ে পরে আর আমা...

ক্যান্সারে আক্রান্ত স্বামীর স্ত্রী এর পরকীয়া

 হাসপাতালের করিডোরে মনীষা ও রবি অপেক্ষা করছিলো , অরুণের বায়োপসি রিপোর্ট আসার। মনীষা নিজের ছোট্ট মেয়েটি কে কোলে নিয়ে বসেছিল। রবি অরুণের ছোটবেলার বন্ধু। সবকাজে সবসময় এক আদর্শ বন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছে। মনীষা কে বাড়ি থেকে পালাতেও সাহায্য করেছে , এবং দাঁড়িয়ে থেকে মনীষা ও অরুণের চার হাত এক করেছে। বায়োপসি রিপোর্টে ধরা পড়লো অরুণের মারণ রোগ ক্যান্সার , তাও আবার অ্যাডভান্স স্টেজ। হাতে আর বেশি সময় নেই। শুনেই মনীষা ভেঙে পড়েছিলো। রবি ওকে শান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলো কিন্তু তারও মনের অবস্থা ভালো ছিলোনা। বন্ধুর এরূপ অবস্থা সেও সহ্য করতে পারছিলোনা। অরুণকে বাড়ি নিয়ে আসা হলো। যতোদিন আছে ততোদিন যত্ন নেওয়ার পরিকল্পনা করা হলো। মনে পাথর রেখে মনীষা নিজের সবটুকু উজাড় করে দিলো নিজের স্বামীকে। অরুণের প্রাইভেট জব ছিল। জীবনের আগে প্রথমে তার চাকরি গেলো। দিন দিন তার অবস্থা সবদিক দিয়ে শোচনীয় হয়েগেলো। চিকিৎসার খরচা , ছোট্ট মেয়েটির ভবিষ্যৎ , সবমিলিয়ে এক অভাবের সংসার। কিন্তু এই দুঃসময়ে একমাত্র তার প্রিয় বন্ধু রবিই নিঃস্বার্থ ভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। অর্থনৈতিক সাহায্য থেকে নৈতিক সাহায্য সবই রবির কাছ থেকে তারা প...