মুম্বাইয়ে এসেছি প্রায় ২ মাস হয়ে গেল। কি করে যে ২ মাস কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না। প্রথমে ঠিক করেছিলাম অফিসের পাশে ঘর ভাড়া নেবো, কিন্তু বাড়ি ভাড়া দেখে তো চক্ষু চরক গাছ। তারপরে ভাবলাম পিজি, দু চারটে দেখলামও। কিন্তু পছন্দ হলো না, ওভাবে কি থাকা যায়! শেষমেষ আবার ঘর ভাড়া, এবার মুম্বাইয়ে না একটু দূরে ঠানেতে।
এখন জীবন মানে সকালে ঘুম থেকে ওঠো, রেডি হও, ট্রেনে করে অফিস যাও, কাজ শেখো, জ্ঞান শোনো, আবার ট্রেনে করে বাড়ি ফেরো। তারপরে যদিও অখন্ড অবসর। মাস খানেক আগে সুমনের সাথে ব্রেকআপ হয়ে গেছে। ফলে এখন আর রাত জেগে ফোন করা, লুকিয়ে দেখা করা, এইসব আর কিছুই নেই। খুব যে লুকিয়ে রাখতে পেরেছিলাম তা নয়, জানতো প্রায় সবাই। শুধু আমরা অফিশিয়ালি কিছু ডিক্লেয়ার করিনি, ব্যাপারটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট টাইপ ছিল।
মুম্বাই চলে আসার পর মাঝেমাঝে ওর কথা মনে পড়ে। আমাদের কলেজ লাইফের প্রেম। আমার ইকোনমিক্স অনার্স ছিল, ওর কেমিস্ট্রি। প্যারামাউন্ট এর শরবত খেতে খেতে আমাকে প্রপোজ করেছিল, আমি না করিনি, হ্যাঁ বলিনি যদিও। গ্রাজুয়েশন এর পরে আমি ক্যাট দিয়ে IIMC আর ও খড়্গপুরে মাস্টার্স করতে গেল। তারপরও সম্পর্কটা টিকে ছিল যেভাবে লং ডিস্ট্যান্স রিলেশন টিকে থাকে। তারপরে একসময় বুঝলাম সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে, অনেকটা কর্তব্য পালন করার মত। সন্ধ্যেবেলার দু'ঘণ্টার ফোন কল গুলো কমতে কমতে ১০-১৫ মিনিটের হয়ে গেল। শেষমেষ সিদ্ধান্তটা নিয়ে নিলাম, মুম্বাইয়ের চাকরিটাও হয়ে গেল।
শত ব্যস্ততার মাঝে মুম্বাইয়ের প্রথম এক মাস ভালই কেটে গেল। ভাড়ার ফ্ল্যাট মোটামুটি গোছানো হয়ে গেছে, যা যা কেনার কিনে ফেলেছি। কিন্তু কিছুদিন পর থেকেই উইকেন্ড গুলোতে বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগতে শুরু করলো। ঘরে বসে থাকতে বা ঘরের কাজ করতে আমার ভালো লাগেনা, আর একা একা ঘুরে বেড়ানোর কোন অভ্যাস নেই। অফিসে কোন বন্ধুও হয় নি যার সাথে উইকেন্ডে ঘোরাঘুরি করা যায়। অফিসে সমবয়সী যারা আছে তারা আমার থেকে অনেক জুনিয়ার, আর আমি যাদের সাথে কাজ করি সেই চল্লিশোর্ধ জনগণের সাথে কাজের বাইরে অন্য কোন কথা হয় না।
কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম একা একা কোথাও ঘুরে আসি। কিছু প্ল্যানিং ও করেছিলাম, কোথায় যাব , কি করে যাব, কোথায় থাকবো ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব প্ল্যান করতাম, আবার ভাবতাম এত প্ল্যান করছিই বা কেন। শুক্রবার রাতে ঠিক করে অনেক উইকেন্ড ট্রিপ তো আমি করেছি। আমি জোকা থেকে গাড়ি দিয়ে যেতাম আর সুমন খড়গপুর থেকে ওর বুলেট টা নিয়ে চলে আসতো। এখানে নিজের গাড়ি নেই তো কি, ট্রেন বাস ট্যাক্সি তো আছে।
একদিন শনিবার খুব সকালবেলা ঘুম ভেঙে গেল। হঠাৎ ঠিক করলাম আজকেই যাব, এখনই যাব। ওয়েস্টার্ন ঘাটের অনেক জায়গা সম্পর্কে অনেক পড়াশুনা করেছি। ট্রেনে করেই যাবো আর কোথাও না কোথাও থাকার জায়গা ঠিক পেয়ে যাব। যেমন ভাবা তেমনি কাজ। খুব তাড়াতাড়ি ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম, একটা অটো নিয়ে ঠানে স্টেশন আর সেখান থেকে ট্রেন।
টিকিট না কেটে ট্রেনে উঠে পড়লাম। যথারীতি টিকিট চেকার এলেন, আমি করুণ মুখ করে বললাম টিকিট নেই। ফাইন দিয়ে একটা টিকিটের ব্যবস্থা হয়েও গেল। আর ভাইয়া বলে ডেকে আর অল্প হেসে একটা জানলার ধারের সিটও পেয়ে গেলাম। 'ভাইয়া' দু'একবার আড় চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছিল বটে কিন্তু আমি তো আর খুকি নই যে তাতে কিছু মনে করব। জানলার ধার দরকার ছিল, পেয়ে গেছি।
ঘন্টা দুয়েকের ট্রেন যায়নি দেখতে দেখতে কেটে গেল। আসলে ট্রেনে করে যেতে আমার বেশ লাগে, জানালা দিয়ে বাইরের প্রকৃতি দেখার মজাই আলাদা।
স্টেশন থেকে বেরোনোর সাথে সাথেই হোটেলের এজেন্ট, ক্যাব ড্রাইভাররা এগিয়ে এলেন। সাধারণত আমি এদের এড়িয়ে চলি। কিন্তু এইবার তো আর হোটেল বুক করা নেই, তাই একজন হোটেলের এজেন্টের সাথে কথা বললাম। ওনার সাথে কথা বলতে বলতে আরো দুই তিনজনে এগিয়ে এলেন। আমি সবাইকে একই কথা জিজ্ঞাসা করলাম, হোটেল কোথায়, রুম আছে কিনা, রুমের ভাড়া কত, ফ্যাসিলিটি কি কি আছে, ব্রেকফাস্ট ফ্রী কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি। সবার কথা শুনতে শুনতে এটা বুঝে গেলাম যে কোনো না কোনো হোটেলে রুম ঠিক পেয়ে যাব। এটা নিয়ে আর চিন্তা করার কোনো কারণ নেই । আমি আসার আগেই রিভিউ পড়ে দু তিনটে হোটেল সিলেক্ট করে নিয়েছিলাম। কাজেই ওনাদের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে সামনে এগিয়ে এলাম।
সামনে এগোতেই একজন এসে বললেন, বহিনজি কাহা জানা হ্যায়? আমি বললাম হোটেলে যাব, উনি জিজ্ঞাসা করলেন হোটেলে আগে থেকে ঠিক করা আছে কিনা। জানালাম যে কোনো হোটেল ঠিক করা নেই । উনি খুব খুশি হয়ে বললেন, চলুন আমার গাড়িতে চলুন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কত ভাড়া, উনি হাজার টাকা চেয়ে বসলেন। হাজার টাকা দিয়ে হোটেলে পৌঁছানোর কোনো মানেই হয় না। দরকার হলে হাজার টাকা বেশি ভাড়া দিয়ে ভালো রুমে থাকবো। অবশেষে একটা অটোওয়ালা সাথে কথা হল, উনি আমাকে আমার পছন্দের হোটেলে দিয়ে যাবেন, 200 টাকা নেবেন। যদি হোটেল পছন্দ না হয় তখন অন্য হোটেল দিয়ে যাবেন, কিন্তু তার জন্য আলাদা করে টাকা দিতে হবে।
যেতে যেতে অটো ড্রাইভার বললেন একটা নতুন হোটেল হয়েছে। আগে ওরা শুধু রেস্টুরেন্ট ছিল এখন থাকার রুম বানিয়েছে। আপনি একবার যেতে পারেন, খাবার খুব ভালো আর রুম পছন্দ না হলে অন্য জায়গায় চলে যাবেন। সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে খিদে খিদে পাচ্ছিল আর খাবার খুব ভালো শুনে মনে হল যাই একবার।
হোটেলটায় ঢোকার মুখেই রেস্টুরেন্ট আর পেছনের দিকে থাকার জায়গা। রেস্টুরেন্ট বাইরেও বসার জায়গা আছে আর ভেতরে এসিতেও বসা যায়।
রেস্টুরেন্ট দেখে খিদে বেড়ে গেল আর অটো ড্রাইভারকে বললাম আগে খেয়ে নি, পরে রুম দেখা যাবে। উনি শুনে বললে যে দেরি হয়ে যাবে, আপনি আগে হোটেল দেখে নিন কিন্তু শেষমেষ রাজি হয়ে গেলেন। ওনাকে বললাম আপনিও আমার সাথে বসে খেয়ে নিন। উনি প্রথমে রাজি হচ্ছিলেন না, দুবার বলতে রাজি হয়ে গেলেন।
খাবার অর্ডার দিয়ে ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে কি কি দেখার জায়গা আছে? কতক্ষণ সময় লাগে অটোতে আর উনি কত ভাড়া নেবেন। ভাড়া উনি ঠিকঠাকই বললেন। মনে মনে ঠিক করে দিয়েছিলাম ওনার অটোতেই যাব, কিন্তু কিছু বলিনি।
আলুর পরোটা খেতে খেতে হঠাৎ খেয়াল করলাম ভদ্রলোক বারবার আমার বুকের দিকে তাকাচ্ছেন। বাইরে বসে গরমে কখন যে উইন্ডচিটারের চেন নামিয়ে দিয়েছি সেটার খেয়াল নেই আর উনি এই সুযোগের পুরো সদ্ব্যবহার করছেন। মাথাটা এত গরম হয়ে গেল যে আর কি বলব। কিছু কিছু লোকের এই একটা দোষ , আপনি তার সাথে যত ভালো ব্যবহারই করুন না কেন, সে ঠিক আপনার বুকের দিকে তাকাবেই।
খাওয়া হয়ে যাওয়ার পরে ওয়েটারকে জিজ্ঞাসা করলাম রুমের জন্য কোথায় কথা বলব। ওয়েটার জানালো যে রেস্টুরেন্টের ক্যাশ কাউন্টারে রুমের জন্য কথা বলতে হয়। যিনি বুকিং দিচ্ছিলেম উনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলেন সঙ্গে কে আছে। কেন বাবা একটা একা একা মেয়ে কি ঘুরতে পারে না ! আর আমি তো আর বাচ্চা মেয়ে নই, ২৫ বছর বয়স হয়ে গেছে। যাইহোক আমার একা থাকা নিয়ে কোন সমস্যা হলো না আর উনি আমাকে জানালেন রুম আছে। আবার পরের প্রশ্নই ছিল ঘুরতে যাওয়ার জন্য হোটেল থেকে গাড়ি ভাড়া পাওয়া যাবে কিনা। ওনারা বললেন যে হোটেলের গাড়ি আছে, এছাড়াও দরকার হলে ওনারা বাইরে থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করে দেবেন। পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা অটো ড্রাইভার যে খুশি হচ্ছেন না বুঝতে পারছি। বেশ হয়েছে, আরো তাকা আমার দিকে।
হোটেলের রুম যেটা দেখালো সেটা খারাপ না। রুমে ঢুকলেই একটা ওয়ারড্রব, পাশে দুটো চেয়ার একটা টেবিল আর একটা কুইন সাইজ বেড। আমার একার জন্য যথেষ্ট। রুমের ভাড়াও একটু কম, হয়তো নতুন খুলেছে বলেই। রুম বুক করে ড্রাইভারকে ২০০ টাকা দিয়ে ছেড়ে দিলাম।
রুমে ফিরে সুমনের কথা মনে পড়ছিল। এইসব রুম বুকিং ওর দায়িত্ব ছিল। এমন একটা ভাব করত যেন বুকিং করা কত সাংঘাতিক কাজ। আর রুমে ঢুকে পড়ে আসল কাজ শুরু করে দিত। সুমনের সাথে উইকেন্ডে বেড়াতে গিয়ে একবার হোটেলে ঢুকে পড়লেই হল। তারপরে বাবুকে ভেতরে ঢুকতে দিতে হবে। এখন এখন তো আর সেসব কিছুই নেই। শেষ কয়েক মাসে জীবন কেমন পাল্টে গেছে।
এইসব চাইপাশ ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ অটো ড্রাইভারটার কথা মনে পড়ল। কিরকম নির্লজ্জের মত তাকাচ্ছিল। বাকি সব মেয়েদের মত আমিও লোকজনের তাকানোর সাথে অভ্যস্ত, কিন্তু এরকম নির্লজ্জের মত কেউ তাকালে একটা অস্বস্তি হয়, রাগও হয়। আমি না হয় এখন উপসী, তোদের তো স্বভাব দোষ।
রেস্ট নিয়ে রেডি হতে একটু দেরী হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি রিসিপশনে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম গাড়ি রেডি তো? উনারা বললেন আপনিতো গাড়ির কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কিছু তো কনফার্ম করে যান নি।
উনারা বললেন গাড়ির ব্যবস্থা ওরা করে দেবেন কিন্তু একটু দেরি হবে। পাশে একটা সদ্য বিবাহিত কাপেল গাড়ির রেট নিয়ে খুব দরদাম করছিল। কাউন্টারের ভদ্রলোক বললেন আপনারা একটা গাড়িতে চলে যান না, রেট একটু কম পড়বে আর তাড়াতাড়ি গাড়িও পেয়ে যাবেন।
রেট নিয়ে আমার কোন সমস্যা ছিল না, আর অন্য কারো সাথে গাড়ি শেয়ার করার ইচ্ছেও ছিল না। কিন্তু পরে ভাবলাম একে তো দেরি হয়ে গেছে, গাড়ি পেতে আরো কত দেরি হবে তার কোন ঠিক নেই। একা একা গেলে সেই লোক কেমন হবে কে জানে, এর চেয়ে ভালো এদের সাথেই যাই।
গাড়িতে আমি আর বউটা পেছনে বসলাম আর বরটা সামনে ড্রাইভারের পাশে বসলেন। ওদের একটাই সমস্যা, একটু পরে পরেই গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলার জন্য নেমে পরে। ড্রাইভার একটু বিরক্ত হচ্ছিলেন কিন্তু আমার ভালই লাগছিল। তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিয়ে টুরিস্ট স্পটে পৌঁছে ভিড়ের মধ্যে একশটা ছবি তোলার থেকে, ওরা যে জার্নিটা এনজয় করছে সেটাই ভালো। আমিও ওদের কিছু ছবি তুলে দিলাম।
গন্ডগোল বাঁধলো ফেরার সময়। ঘুরতে এবং খেতে আমাদের বেশ কিছু সময় লেগেছে তাই ফেরার সময় ড্রাইভার একটু স্পিডেই গাড়িটা চালাতে শুরু করল। হঠাৎ বউটা বলে গাড়ি থামাও। আমি ভাবলাম হয়তো আবার ছবি তুলবে, কিন্তু কিছু ভাবার আগেই গাড়ির মধ্যে হরহর করে বমি করে দিল।
আমি ড্রাইভার কে বললাম গাড়িটা দাঁড় করান, উনি একটু রেস্ট নিক, আপনি গাড়ির ভেতরটা একটু পরিষ্কার করে দিন। তারপরে আস্তে আস্তে গাড়ি চালান।
এইসব এইসব করতে করতে প্রায় ১৫-২০ মিনিট চলে গেল। আমি গাড়িতে উঠে দেখলাম ভেতরটা পরিষ্কার হয়েছে বটে কিন্তু বমির গন্ধ বের হচ্ছে। কিছু বললাম না কারণ কিই বা করার আছে। ড্রাইভার আবার গাড়ি স্টার্ট করলেন, স্টার্ট করার সাথে সাথে আবার বমি। এবারও গাড়ির ভেতরে আর কিছুটা আবার আমার উইন্ডচিটারের হাতায় পড়ল।
এইবার ড্রাইভার দেখলাম বেশ রেগে গেলেন। উনি সঙ্গে সঙ্গে হোটেলে ফোন করে বললেন যে প্যাসেঞ্জার শুধু বমি করছে, গাড়ি একদম নোংরা হয়ে গেছে, ফিরতে ফিরতে দেরি হয়ে যাবে। হোটেল থেকে বলল আরেকটা গাড়ি আসছে, বমির ওষুধ দিয়ে আসছে, চিন্তা করার কোন কারণ নেই। পেসেঞ্জাররা রেস্ট নিক, কোনো অসুবিধা হবে না।
আরেকটা গাড়ি আসছে শুনে আমি বেশ খুশি হলাম। বমির গন্ধে আমার নিজেরও অস্বস্তি হচ্ছিল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম কখন নতুন গাড়ি আসবে। তখন সূর্যাস্ত হচ্ছে, বাইরেটাকে দেখতেও খুব ভালো লাগছিল। বরটাকে দেখলাম খুব আদর করে বউটার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি হঠাৎ দেখে আমাদের গাড়ির সামনে একটা বাইক এসে থামল। ওনাকে চেনা চেনা লাগছে তারপর মনে পড়ল কাউন্টারে উনি বসে ছিলেন কারো সাথে কথা বলছিলেন। উনি এসে ওষুধ দিলেন তার পরে আমাকে বললেন আপনি বরং আমার সাথে বাইকে চলুন। অচেনা লোকের সাথে বাইকে যাওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু গাড়িতে বমির গন্ধ, আবার যে বমি করবে না তারও নিশ্চয়তা দিই। বরটাও বলল , দিদিভাই আপনি কিছু মনে না করলে বাইকে চলে যান। আমাদের জন্য আপনাকে এই বিরম্বনায় পরতে হলো। শেষমেশ ঠিক হলো আমি বাইকেই যাব, গাড়ি আর বাইক একসাথে চলবে এবং গাড়িটাকে বলা হলো খুব আস্তে আস্তে চালাতে।
বাইকের পেছনে উঠে বসলাম। কেমন একটা অদ্ভুত লাগছিল। বাইক চলতে শুরু করল, উনি খুব আস্তে আস্তেই বাইক চালাচ্ছিলেন। কেউই কারো সাথে কথা বলছিলাম না, কথা কি বলবো কেউ তো কাউকে চিনি না।
আমি ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম আপনি কি হোটেলের ম্যানেজার? উনি হেসে বললেন না না আমি এই হোটেলের ইনভেস্টার। উইকেন্ডে আসি, এছাড়া আমি জব করি। উনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন আমি কি করি? আমি বললাম আমি এমবিএ শেষ করে জব করছি। উনি বললেন যে উনিও ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিট করে জোকা থেকে এমবিএ করেছেন। আমিতো জোকা শুনে খুশি হয়ে গেলাম, বললাম আমিও তো জোকা। যাক বেড়াতে এসে জোকার একজন সিনিয়ারের সাথে দেখা হয়ে গেল। উনি বললেন যে আমি কিন্তু তোমার থেকে অনেকটাই সিনিয়ার। কোন ইয়ারে পাস করেছে সেটাও বললেন। আমি মনে মনে হিসাব করলাম, উনি আমার থেকে 16 বছর আগে পাশ করেছেন আর ইঞ্জিনিয়ারিং করতে এক বছর বেশি লাগে। উনি আমার থেকে প্রায় ১৭-১৮ বছরের বয়সে বড়।
ওনাকে জিজ্ঞাসা করলাম স্যার আপনার নাম কি। উনি বললেন আমার নাম রাজেশ আর এতক্ষণ যখন স্যার বলে ডাকো নি, তখন আর স্যার বলতে হবে না। তুমি তো বাঙালি, তুমি আমাকে রাজেশদা বলেই ডাকো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম আমি বাঙালি বুঝলেন কি করে? আমার হিন্দি উচ্চারণ শুনে? রাজেশদা হেসে বলল তোমার হিন্দি উচ্চারণ বেশ ভালো। প্রশংসা কার না ভালো লাগে, রাজেশদা বললোও বেশ বিশ্বাসযোগ্য করে।
অবশেষে আমরা হোটেলে পৌঁছলাম। ওদের গাড়িটাও আমাদের সাথে সাথেই পৌঁছল। বউটাকে দেখে মনে হল একটু ভালো আছে। ওরা ওদের ঘরে চলে গেল। আমি রাজেশদা কে ধন্যবাদ জানালাম আর হ্যান্ডসেক করলাম। রাজেশদা বলল, অতসী ইভিনিং স্ন্যাক্স তুমি ঘরেও খেতে পারো বা বাইরে এসেও খেতে পারো। আমি বললাম ঠিক আছে। আমি ঘরে গিয়ে একটু ফ্রেশ হয়ে অর্ডার করছি। রাজেশ দা বলল অর্ডার করে দিও, খাবার রেডি হতে হতে কিন্তু আধঘন্টা লাগিয়ে দেবে। আমি বললাম ঠিক আছে, আমি তাড়াতাড়ি অর্ডার করে দেব। রাজেশদা তো তখনও আমার হাত ধরে আছে। আমি একটু হেসে এবার হাতটা ছাড়িয়ে দিলাম, রাজেশদাও একটু হাসলো। আমি রাজেশদাকে টাটা বলে খুশি মনে নিজের রুমে চলে এলাম।
রাজেশদা বেশ স্মার্ট। চাকরি করে সাথে একটা ব্যবসা খুলেছে , কথাবার্তাও খুব ভালো। আমার ডান হাতটা তো এখনো গরম হয়ে আছে।
রুমে ঢুকেই প্রথমে স্নান করলাম। শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে মনটা বেশ ফুরফুরে লাগছিল। বমি পর্ব বাদ দিয়ে আজকের ঘোরাটা বেশ ভালই হয়েছে। এই জায়গাটা সত্যিই সুন্দর, আর আমার একটা ছুটির দরকার ছিল।
স্নানের পর খাবার অর্ডার করতে গিয়ে দেখি রুমের ইন্টারকম কাজ করছে না। তার মানে তো খাবার অর্ডার দিতে বাইরে যেতে হবে। ইস রুমে ঢোকার আগে যদি খাবারটা অর্ডার দিয়ে দিতাম তাহলে এতক্ষণে খাবার রেডি হয়ে যেত। নিজের বোকামিতে নিজের উপরই রাগ হলো। কিন্তু কি আর করা যাবে, তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে খাবার জন্য বাইরে চলে এলাম।
বাইরে বেরিয়ে দেখি রেস্টুরেন্টে বেশ ভালো ভিড়। আর রেস্টুরেন্টের কোণের দিকের একটা টেবিলে রাজেশদা একা একা বসে আছে। আমি রাজেশদার টেবিলের পাশে গিয়ে বললাম, রাজেশ দা খুব খিদে পেয়েছে। খাবার অর্ডার এখনো করা হয়নি। তাড়াতাড়ি কি হবে গো?
রাজেশ দা বলল আমি চিকেন পকোড়া অর্ডার করেছি, আমারটা এক্ষুনি এসে যাবে। দুজনে মিলে খেতে শুরু করি আর তুমি কিছু একটা অর্ডার করে দাও। পকোড়া খেতে খেতে ওটা এসে যাবে।
খিদেও পেয়েছিল তাই আর কিছু না ভেবে রাজেশদার পাশে গিয়ে বসে পড়লাম। পকোড়া খেতে খেতে রাজেশদা জিজ্ঞাসা করল, অতসী বিয়ার খাবে? আমিও দিব্যি বলে দিলাম যে আমি বিয়ার খাই না। রাজেশদা আমার দিকে তাকিয়ে মিচকি হেসে বলে সত্যি? আমিও বললাম কেন বিশ্বাস হচ্ছে না? রাজেশদা বলল একদম না, কাঁচা ঢপ মারছো। আমি হেসে বল্লাম আসলে সত্যি বলতে কি, খুব অল্প কিছু পছন্দের লোকের সাথে বসলেই খাই। না হলে খাই না। রাজেশদা বলল আমিও তাই। লোকজন পছন্দ না হলে দরকার ছাড়া কথাই বলি না তো বিয়ার খাওয়া। এই বলে একটা ওয়েটারকে ডেকে বললো দুটো বিয়ার দিয়ে যেতে। আমি হেসে ফেললাম কিন্তু আর না করলাম না। বাইরে ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়া দিচ্ছে, উইন্ডচিটারে বউটা বমি করে দেওয়ার পরে সেটা আর পরিনি, একটু বিয়ার ভালই লাগবে।
বিয়ার খেতে খেতে রাজেশ দা জিজ্ঞাসা করল ,অতসী হঠাৎ একা একা ঘুরতে বেরিয়েছো, কি ব্যাপার? তোমাকে দেখে তো মনে হচ্ছে না যে তুমি একা একা ঘুরে বেড়াও। আমি এই প্রসঙ্গে কোনো কিছু বলতে আগ্রহী ছিলাম না। তাই শুধু বললাম মুম্বাইতে নতুন চাকরি নিয়ে এসেছি, ভাবলাম একটু আশেপাশের জায়গাগুলো ঘুরে দেখি। রাজেশদা যাতে এই ব্যাপারে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে তাই আমি বললাম রাজেশ দা, তুমি হঠাৎ এই হোটেলে কি করে আর কেন ইনভেস্ট করলে? রাজেশ দা বলল ২০০৮ সালের রেসেশনের সময় রাজেশ দা অনসাইটে পোস্টিং ছিল। রেসেশনের সময় প্রচুর লোকের চাকরি চলে যায় আর রাজেশদাদের আবার দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। পরপর দু'বছর কোনো ইনক্রিমেন্ট পায়নি। সেই থেকেই ঠিক করে নিয়েছিল যে চাকরির বাইরে কিছু একটা উপার্জনের জায়গা তৈরি করতেই হবে। তারপর থেকেই এই বিজনেস ওই বিজনেস করতে করতে অবশেষে এই হোটেল। রেস্টুরেন্ট আগে থেকেই ছিল আর পেছনের দিকটা ফাঁকাই ছিল। এই জমিতে যে রুম হয়েছে তার সব খরচটা দিয়েছে রাজেশদা দিয়েছে। পার্টনারশিপের ব্যবসা, প্রফিট শেয়ারিং হয়।
আমি বললাম নতুন করেই যখন ঘর করেছো, আরো কিছু ফ্যাসিলিটি দিতে পারতে। বাথরুমে হেয়ার ড্রায়ার নেই, তোমার রুমের ইন্টারকম কাজ করে না, এইসব কেন? রাজেশ দা বললে ইন্টারকম দিব্যি কাজ করে, হয়তো তারটা খোলা আছে, পেছনে গুঁজে দিলেই কাজ করতো। আমি বলে বসলাম পিছনে গোঁজা কি আমার কাজ নাকি? রাজেশ দা মিচকি হেসে বলল না অতসী, ওটা আমার কাজ, আমি রাতে তোমার রুমে গিয়ে গুঁজে দেবো । আমি বুঝতে পারলাম কি বলেছে, কিন্তু কোন উত্তর দিলাম না।
আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে রাজেশ দা বলল, তোমার ক্যারিয়ার প্ল্যান কি? আমি বললাম কোন প্ল্যান নেই, ছোটবেলায় পড়তে হবে তাই পড়েছি। গ্রাজুয়েশন করতে করতে বুঝতে পারলাম যে এমবিএ করলে ভালো প্রসপেক্ট আছে, এমবিএ করে নিলাম। অংকে আরেকটু ভালো হলে হয়তো রিসার্চে যেতাম, কিন্তু মনে হলো যে এমবিএ টাই সহজ হবে। রাজেশদা নাকি অঙ্কে ভালই ছিল, নিজের ইচ্ছেও ছিল যে অঙ্ক নিয়ে পড়াশোনা করবে। কিন্তু ক্লাস টুয়েলভে প্রেম করতে শুরু করে, আর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে তাড়াতাড়ি চাকরি পেয়ে যাবে। সেই জন্য অংকে অনার্স না পড়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তি হয়ে যায়।
আমি হেসে বললাম, আরব্বাস ক্লাস টুয়েলভ থেকে প্রেম করছো! রাজেশ দা হেসে বললো ক্লাস ৮ থেকে করছি, ১২ এর টা সিরিয়াস। আর আমাকে দুম করে জিজ্ঞাসা করে বসলো তুমি কবে থেকে করছ? আমিও কিছু না ভেবে উত্তর দিয়ে দিলাম কলেজ থেকে। এক মুহূর্ত থেমে জিজ্ঞাসা করল সদ্য ব্রেকআপ হয়েছে? আমি বললাম না, বেশ কিছু মাস হয়ে গেছে।
রাজেশ দা আমাকে বলল যে রাজেশ দা বিয়ার রিপিট করবে, আমি বললাম আমিও।
গ্লাসে বিয়ার ঢালতে ঢালতে ভাবছিলাম যে এই লোকটাকে ঘন্টাখানেক আগেও চিনতাম না, এখন বসে দিব্যি কেমন গল্প করছি। বিয়ার খেতে খেতে খেয়াল করলাম, রাজেশদা আমার সাথে গল্প করছে বটে কিন্তু আশেপাশের সব টেবিলের দিকে নজর রাখছে। রাজেশদা কে জিজ্ঞাসা করলাম রাজেশদা, তুমি খেয়াল করছো না সব টেবিলে খাবার ঠিকমত আসছে কিনা? রাজেশ দা বলল খাবার ঠিক মতো আসছে কিনা সেটা তো দেখছি না , শুধু খেয়াল রাখছি লোকজন খুশি কিনা। তারপরে আবার দিকে তাকিয়ে, একটা ফিচেল হাসি হেসে জিজ্ঞাসা করল অতসী তুমি খুশি তো? আমি কোন উত্তর না দিয়ে হেসে দিলাম।
বিয়ার খেতে খেতে রাজেশদা কে বললাম রাজেশ দা, আরেকটা সাইডডিশ কিছু লাগবে তো। রাজেশদা বলল, বেবি এবার তুমি ডিনারের অর্ডার দিয়ে দাও। আমি রাজেশদা কে বললাম, এই তুমি আমাকে বেবি বলে ডাকলে কেন? রাজেশদা বলল, আরে তুমি তো একটা ছোট্ট বেবির মতো , বলে একটা হাত দিয়ে আমার গাল দুটোকে টিপে দিল।
আমি অল্প রেগেই বললাম, তুই বড্ড অসভ্য রাজেশদা । তোমার মনে হয় নেশা হয়ে গেছে। রাজেশদা হাহা করে হেসে বলল, দু বোতল বিয়ার খেয়ে কারো আবার নেশা হয় নাকি। তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে রাজেশ দা বলল, তুমি সত্যি খুব সুন্দর অতসী। তোমার সাথে লাস ভেগাসেও যাওয়া যায়, আবার লাইব্রেরীতেও বসা যায়। এরকম অদ্ভুত প্রশংসা কেউ কখনো আমার করেনি। আমি কথা ঘোরানোর জন্য বললাম, না না আমি আর ডিনার করবো না তুমি কিছু অর্ডার দিয়ে দাও।
আমি মনে মনে ভাবছি যে লোকটা কি চায়। আমার থেকে এতটা বড়, এমনিতে ভালো ব্যবহার করছে কিন্তু আবার গালটাও টিপে দিল। ঘরের ইন্টারকম নিয়ে এমন একটা মন্তব্য করল যার অন্য রকম মানেও হতে পারে। অথচ লোকটার উপর আমার যতটা বিরক্তি বা রাগ হওয়া উচিত, সেটা তো হচ্ছে না। আমি ঠিক করলাম আমি আর বিয়ার খাব না। আরেকটা কিছু খাবার এলে সেটা খেয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়বো।।
এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে দেখি সেই সদ্য বিবাহিত যুগল খেতে এসেছে। আমি ডাকতে যাব রাজেশ দা ফিসফিস করে বলল ডেকো না। আমি রাজেশ দা কে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলাম কেন? রাজেশ দা মিচকি হেসে বলল ওরা হানিমুন কাপেল, ওদেরকে একটু স্পেস দাও। তাও আমি হাত তুলে ডাকলাম। দেখলাম বরটা একাই এগিয়ে এলো। রাজেশদাই জিজ্ঞাসা করল যে বউটা কেমন আছে, আর কোন সমস্যা হয়েছে কিনা? বরটা বলল সব ঠিক আছে। তারপরে আমার দিকে তাকিয়ে বলে বিয়ার খাচ্ছেন? আপনাদের দুজনের তো ভালো ফ্রেন্ডশিপ হয়ে গেছে দেখছি। আমি কিছু একটা বাজে উত্তর দিতে যাব তখন রাজেশ দা একটা হাত দিয়ে আমার থাই চেপে ধরল। আমি বুঝলাম কিছু বলতে বারণ করছে।
বরটা চলে গেলে আমি রাজেশদা কে বললাম যতসব ফালতু লোকজন, কিছু একটা উত্তর দিয়ে দেয়া উচিত ছিল। রাজেশদা বলল অতসী, এই জন্যই তো তোমাকে আমি ওদেরকে ডাকতে না বলেছিলাম। আমি বললাম যে কি করে বুঝবো একটা ফালতু লোক। কি যে ভাবছে আমাদের সম্পর্কে কে জানে। রাজেশ দা খুব একটা নিষ্পাপ মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার কি মনে হয় অতসী, ওরা কি ভাবছে আমাদের সম্পর্কে? লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেল, আমি কিছু উত্তর দিতে পারলাম না। দুষ্টু রাজেশটা ঠোঁটের কোণায় অল্প হাসি নিয়ে স্বাভাবিক মুখ করে বসে রইল।
বিয়ার খেতে খেতে রাজেশ দা বলল, ডার্লিং একটু বসো, আমি এক্ষুনি কিচেন থেকে ঘুরে তোমার কাছে ফিরে আসছি।। আমি বললাম রাজেশ দা, তুমি আবার আমাকে এসব ভুলভাল নাম ধরে ডাকছো।
রাজেশদা বললো বেবি বলে ডাকলে আপত্তি, ডার্লিং ও বলবো না, সুইটহার্ট বললেও হয়তো আপত্তি করবে, তাহলে কি পছন্দ বলো, জানু না হানি। আমি রাজেশদার থাইতে একটা চাটি মেরে বললাম আবার তুমি দুষ্টুমি আরম্ভ করেছো!
রাজেশদা আমার হাতটা ধরে নিয়ে বলল অতসী, দুষ্টুমি বলতে আমি কিন্তু অন্য কিছু বুঝি। আমি বললাম থাক, তোমাকে আর সেটা বলতে হবে না। রাজেশদা বলল বলব কেন, আমরা দুজনে মিলে করবো। আমি বললাম ছিঃ, ছাড়ো আমার হাত। রাজেশদা আমার হাতটা জোরে চেপে ছেড়ে দিয়ে হেসে উঠে চলে গেল।
আমি একা একা বসে ভাবছি কি হচ্ছে। লোকটা আমার সাথে ফ্লার্ট করছে আর আমি হ্যাঁ হ্যাঁ করছি। হ্যাঁ হ্যাঁ করে হাসছো যদিও না, কিন্তু লোকটাকে তো থামাচ্ছিও না। এরপর যদি রাজেশদা ধরে নেয় যে আমার দিক থেকে কোন আপত্তি নেই, তাহলে তো রাজেশদা কে পুরো দোষ দেওয়া যাবে না। না না, এসব ঠিক হচ্ছে না। রাজেশদা আমার থেকে ১৭-১৮ বছরের বড়। মানে আমি যখন জন্মেছি তখন রাজেশদা ক্লাস ১১-১২এ, আমার মায়ের বয়সী মহিলাদের বৌদি বলে ডাকত আর এখন আমার সাথে ফ্লার্ট করছে! ৪-৫ বছর বড় হলে তাও ভেবে দেখা যেত। লোকটা এমনিতে মন্দ না, বেশ ইন্টারেস্টিং।
একটু পরে রাজেশদা আবার আমার পাশে বসলো। আমি তো মনে মনে ঠিক করে নিয়েছি, এবার ফ্লাটিং করলে আমি কিছু একটা বলে দেবো আর উঠে চলে আসবো। রাজেশদা এসে বলল, অতসী কিচেনটা একবার ঘুরে দেখে এলাম। আমাকে জিজ্ঞাসা করল আমার এই রেস্টুরেন্টের খাবার কেমন লেগেছে? আমি বললাম খাবার বেশ ভালো কিন্তু অপশন কম। রাজেশদা বলল অপশন বেশি রাখলে কাঁচামাল ওয়েস্ট বেশি হয়, আর বিক্রি কিন্তু অল্প কিছু আইটেমই বেশি হয়। ফলে আইটেম বাড়াতে হলে বেশি বিক্রি হওয়ার জিনিসগুলোর দাম বাড়াতে হবে। আর সেটা এখন আমরা করতে চাইছি না। আমি রাজেশদা কে খাবারের দাম কি করে ঠিক হয়, রুমের ভাড়া কি করে ঠিক হয় এইসব জিজ্ঞাসা করলাম আর এইসব আলোচনা করতে করতেই আমাদের খাওয়া শেষ হয়ে গেল। আমি খেয়াল করলাম যে রাজেশদা ফ্লার্ট করে, তারপর একটা অন্য ডিসকাশনে চলে যায়, আবার খানিকক্ষণ পরে কিছু একটা করে।
খাওয়া শেষ হবার পরে রাজেশদা বলল আতসী চলো একটু হেঁটে আসি, তোমাকে একটা ভালো স্পট দেখাই। আমি বললাম এত রাতে কোথায় হাঁটতে যাব! রাজেশদা বলল নটাও বাজেনি আর আমরা দূরে কোথাও যাচ্ছি না, ১০ মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসব। রাজেশদার সাথে কিচেনের পাশের রাস্তা দিয়ে একটা জায়গায় এলাম। জায়গাটা হোটেল থেকে দশ মিনিটও দূরে না।। দেখলাম সামনে একটা খাদের মত আর সেখানে দিয়ে একটা সরু জলধারা বয়ে চলেছে। চাঁদের আলোয় জায়গাটা আরো সুন্দর লাগছে। দুজনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে জায়গাটা দেখতে লাগলাম। আমি মোবাইল বের করে দু তিনটে ছবিও তুললাম , কিন্তু ছবিতে জায়গাটা কত ভালো সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
রাজেশদা কে বললাম রাজেশ দা, আমার ফোনটা নিয়ে আমার দুটো তিনটে ছবি তুলে দেবে? পুরো রেঞ্জটা সমেত ছবি নিও। রাজেশদা আমার দু তিনটে ছবি তুলে দিল কিন্তু অন্ধকারে আমাকে ভালো বোঝাই যাচ্ছে। রাজেশদা বলল দাঁড়াও, আমার ফোনে এর থেকে ভালো ছবি ওঠে। রাজেশদা আমার কয়েকটা ছবি তুলে দেওয়ার পরে আমি রাজেশদা কে বললাম আমি কি তোমার ছবি তুলে দেবো? রাজেশ দা বলল সেলফিই তুলি, আমার যা চেহারা আর গায়ের রং, দূর থেকে ছবি তুললে অন্ধকারে বোঝাই যাবে না। আমি ফট করে বলে বসলাম, কি যে বল রাজেশ দা তোমাকে দেখতে বেশ ভালো। বলেই ভাবলাম কি ভুল করলাম, এবার নিশ্চয়ই কিছু একটা কমেন্ট করবে। রাজেশদা শুধু মিষ্টি এসে থ্যাংক ইউ বলল, কোন উল্টোপাল্টা কমেন্ট করলো না।।
রাজেশদা নিজের একটা সেলফি নিয়ে বলল, অতসী এসো দুজনে মিলে একটা সেলফি তুলি। আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ এসে রাজেশদার পাশে দাঁড়ালাম। এরকম একটা নির্জন সুন্দর জায়গায় রাতের অন্ধকারে রাজেশদার পাশে দাঁড়াতে কেমন একটা অস্বস্তি হচ্ছিল। রাজেশ যে একটা সেলফি তুললো আর ছবিটা দেখিয়ে আমাকে বললো, অতসী আমাদের মাঝখানের লোকটাকে কিন্তু দেখা যাচ্ছে না।
আমি কিছু না বলে চুপচাপ রাজেশদার গা ঘেঁষে দাঁড়ালাম। রাজেশদা বলল অতসী তুমি এত জড়োসড়ো হয়ে আছো কেন? তুমিই না হয় আমাদের সেলফিটা তুলে দাও। আমি রাজেশদার ফোন নিয়ে আমাদের দুটো সেলফি তুললাম। সেলফি তোলার সময় রাজেশদা আলতো করে আমার কোমরটা জড়িয়ে ধরলো। আমি ভেতরে ভেতরে কেঁপে উঠলাম কিন্তু মুখে কিছু বললাম না। ছবি তুলে রাজেশদা কে ফোনটা ফেরত দিয়ে দিলাম।
ছবি তোলা শেষ হয়ে গেলে রাজেশদা কে বললাম চলো এবার ফিরে যাই। ফেরার সময় আমরা কেউই কোনো কথা বলছিলাম না। আমি আগে আগে হাঁটছিলাম আর রাজেশদা আমার পেছনে। আমি শুধু আমাদের পায়ের শব্দ আর আমার বুকের ধুকপুকানি শুনতে পাচ্ছিলাম। কিচেনের কাছে এসে রাজেশদা কে বললাম, তুমি একটু পিছন পিছন এসো। আমাদের দুজনকে একসাথে দেখলে লোকজন কি ভাববে। রাজেশদা অল্প হেসে উঠলো, কিন্তু এবার আর কিছু বলল না। আমিও অল্প হেসে হাঁটার স্পিড বাড়িয়ে এগিয়ে গেলাম। একটু এগিয়ে রাকেশদার শব্দ না পেয়ে পিছনে ফিরে দেখি রাকেশদা কিচেনের ভেতর ঢুকে গেল। আমিও আর খাবার জায়গা দিকে না গিয়ে উল্টোদিকে আমার রুমে চলে এলাম।
দু বোতল বিয়ার খেয়ে খুব টয়লেট পেয়েছিল। টয়লেট করে হাত মুখ ধুতে গিয়ে দেখি চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে আছে। নিজের অবস্থা দেখে নিজেই হাসি পেল, একটু লজ্জাও লাগলো। রাজেশদা কি ভাবলো আমার সম্বন্ধে! তারপরেই মনে হল আরে ফ্ল্যার্ট করতে তো ওই শুরু করেছে। তাও আবার ফ্ল্যার্ট করেই তারপরে অন্য আলোচনা শুরু করে দিচ্ছে। ভীতুর ডিম একটা। তারপরে ভাবলাম আর কত সাহসী হবে! প্রথম দিনেই বেবি, ডার্লিং বলে ডাকছে, গাল টিপে আদর করে দিচ্ছে, কোমরে হাত দিচ্ছে।
আমার সব থেকে ভালো যেটা লাগছে যে রাজেশদার মধ্যে একটা কন্ট্রোল আছে। সুমনের মধ্যে তো এটা একেবারেই ছিল না। আমাদের সম্পর্ক শুরুর পরের প্রথম সরস্বতী পুজোতে আমার পেটে কামড়ে দাগ করে দিয়েছিল। ব্যথা লেগেছিল, রাগও হয়েছিল। মনে হয়েছিল যে মা সরস্বতী পাপ দেবেন। রেগেমেগে ওদের চিলেকোঠার ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে চলে এসেছিলাম। তবে ঘরে শুধু আমি আর রাজেশদা থাকলে তখন রাজেশদা কত ভদ্র থাকবে সেটা দিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। বাবু নাকি রাতে আমার ঘরে এসে গুঁজে দেবে! কত্তো শখ।।
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, বুঝতে পারিনি। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখলাম ওই খালটা দিয়ে জল না বিয়ার বয়ে চলেছে। আমি বিয়ারের লোভে নিচে নেমে পড়েছি কিন্তু আর উঠতে পারছি না। যতই উপরে উঠতে যাচ্ছি পায়ের তলার মাটি পিছনে পিছনে যাচ্ছে। চারিদিকে কেউ নেই, রাজেশদাও নেই। চারপাশ কেমন ধীরে ধীরে অন্ধকার হয়ে আসছে আর আমি বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছি। ভয় পেয়ে ঘেমে নেয়ে ঘুম থেকে উঠে পরলাম।
ঘুম ভেঙে দেখি মাত্র ১১টা বাজে। সন্ধ্যেবেলা পকোড়া আর অন্যসব ভাজাভুজি খাওয়ার ফলে একটু অম্বল হয়েছে, সঙ্গে মাথাব্যথা। খালি চুপচাপ বসে রইলাম, অল্প অল্প করে জল খেলাম। খানিকক্ষণ পরে মনে হল একটু বাইরে থেকে হেঁটে আসি, কাউকে দেখতে পেলে ওষুধ চেয়ে নেব।
বাইরে বেরিয়ে দেখি কেউ নেই। মনে হয় সবাই শুয়ে পড়েছে। আমি আমার রুমের সামনের জায়গাটায় ঘুরপাক খেতে লাগলাম। চার পাক হাঁটার পরে যখন ভাবছি এবার রুমে ফিরে যাব তখন দেখি রাজেশদা বেরিয়ে এসেছে। আমাকে ডেকে বলল এই অতসী, রাতের বেলা এখানে একা একা গোলগোল করে ঘুরে বেড়াচ্ছ কেন। আমি বললাম তুমি হঠাৎ কোথা থেকে এলে? রাজেশদা বলল, তোমাকে পাগলের মতো একা একা ঘুরতে দেখে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। আমি বললাম একটু বদহজম হয়েছে, মাথাও যন্ত্রনা করছে। তাই হাঁটতে বেরিয়েছি, এবার রুমে ফিরে যাব। তোমার কাছে কোন ওষুধ থাকলে দাও।
রাজেশদা হঠাৎ হাতটা ধরে আমাকে ওর কাছে টেনে নিয়ে গালে একটা চুমু খেল। আমি মুহূর্তের জন্য থতমত খেয়ে গেছিলাম, সামলে ওঠার আগেই দেখি রাজেশদা দুহাত দিয়ে আমার কোমরটা জড়িয়ে ধরেছে। আমি ঘাবড়ে গিয়ে বললাম ছাড়ো আমাকে, কি করছো তুমি! রাজেশ দা কোন উত্তর দিল না। আমি আমার হাত দুটো দিয়ে রাজেশদার হাত সরাতে চেষ্টা করলাম। লোকটার হাতে কি জোর, একটুও নাড়াতে পারলাম না। জিম করে মনে হয়।
রাজেশদা খুব শান্ত ভাবে আমাকে বলল অতসী শুধু আমি চুমু খাব তুমি খাবে না? আমি বললাম ছাড়ো তুমি আমায়। রাজেশদা বলল আগে চুমু খাও তারপরে ছাড়বো। আমি বললাম আগে ছাড়ো। রাজেশদা কোমর ছেড়ে আমার হাত দুটো ধরে নিল।
দুজনেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি, কেউ কোন কথা বলছি না। আমি মাথা নিচু করে আছি আর তাও বুঝতে পারছি যে রাজেশ দা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার বুকের ধুকপুকানি টেনশনে হচ্ছে না উত্তেজনায়, সেটা বুঝতে পারছি না। আমাকে অনন্তকাল এভাবে অপেক্ষা করিয়ে অবশেষে রাজেশদা হাত দিয়ে আমার মুখ তুলে অন্য গালে চুমু খেল। আমি চোখ তুলে তাকাতেই আমার দুচোখে চুমু খেল। আমি দুদিকে মাথা নাড়িয়ে না না করতে থাকলাম। রাজেশদা ওর নাক আমার নাকে ঘষে দিল। আমি আর থাকতে পারলাম না, দুই হাত দিয়ে রাজেশদার গলা জড়িয়ে ধরলাম। রাজেশদাও আমাকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিল।
দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। রাজেশদা খুব মৃদুস্বরে আমাকে বললো, অতসী তাকাও আমার দিকে আর এইবার বলেই দাও তুমিও আমাকে কতটা ভালোবাসো। রাজেশদার চোখে মুখে এখন যুদ্ধজয়ের আনন্দ আর আমার চোখে সমর্পণের লজ্জা। আমি কিছু বলার আগেই রাজেশদার ঠোঁট আমার ঠোঁটের কাছে নেমে এলো আর আমি আমার মুখ সরিয়ে নিলাম। রাজেশদা আমার ডান গালে চুমু খেল, তারপরে বাঁ গালে, তারপরে বাঁ কানের লতিতে। তারপরে চোয়াল চুইয়ে চুমু গুলো গলায় নেমে এলো। এতক্ষনে আমার মধ্যে একটু হলেও সংকোচ ছিল, কিন্তু গলায় চুমু সব দ্বিধা দ্বন্দ্ব সংকোচ দূর করে দিল। গলা বেয়ে থুতনি ছুঁয়ে রাজেশদার ঠোঁট যখন আবার আমার ঠোঁটের কাছে এলো, আমি নিজেই চকাস করে চুমু খেয়ে নিলাম।
রাজেশ দা হয়তো নিজেও ভাবেনি যে আমি ওকে চুমু খাব। খুব খুশি যে হয়েছে সেটা ওর চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। রাজেশদা আর সময় নষ্ট করলো না, ওর ঠোঁট দুটো আমার ঠোঁটের দখল নিয়ে নিল। রাজেশদার চুমু আগ্রাসী নয় বরং ধীর স্থির আর গভীর। এত শান্ত ভাবেও যে চুমু খাওয়া যায়, আমার কোন ধারণাই ছিল না। ধীরে ধীরে আমিও চুমুতে সঙ্গত করতে শুরু করলাম আর স্থান কাল পাত্র সব ভুলে আমরা চুমুতে মেতে উঠলাম। চুমুর নেশায় পুরোপুরি হারিয়ে গেছিলাম কিন্তু হুঁশ ফিরে এল যখন বুঝতে পারলাম রাজেশদার হাত কোমর ছেড়ে নিচে নেমেছে আর দিব্যি দলাই মালাই করছে। আমি চুমু থামিয়ে বললাম এই রাজেশ দা, কি করছো? রাজেশ দা আমার বলার ভঙ্গি দেখে কি বুঝলো কে জানে, দলাই মালাই চালু রেখেই বলল তোমাকে আদর করছি। আমি বললাম লোকজন দেখবে তো! রাজেশদা বলল, হ্যাঁ চলো আমরা তোমার রুমে যাই। আমি রাজেশদার বুকে দুটো কিল মেরে বললাম খুব সখ না! তুমি তোমার রুমে যাও আমি আমার রুমে যাচ্ছি। এই বলে সড়াৎ করে পেছনে ঘুরে গেলাম।
আমি জানতাম রাজেশদা আমাকে ছেড়ে দেবে না। মনে মনে চাইও নি আমাকে ছেড়ে দিক। আর ঠিক তাই হলো। রাজেশদা পিছন থেকে দুহাত দিয়ে আমার পেট জড়িয়ে ধরল। আমি বললাম ছাড়বে না আমাকে? রাজেশদা কোন উত্তর না দিয়ে ওর ওটা আমার পেছনে চেপে ধরল। ঘটনার আকস্মিকতায় আর ওটার স্পর্শে আমি শিউরে উঠলাম। রাজেশদা আমার কানের কাছে মুখ এনে খুব আস্তে আস্তে বললো পুরো বেলুন। তারপর একটু থেমে বলল , আজকে ভালো করে পাম্প করে দেব। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম, কিন্তু তাতে উল্টো ফল হল। রাজেশদার হাত পেট ছেড়ে আমার বুকের দখল নিল। আমি আমার দুহাতের সর্বশক্তি দিয়ে রাজেশদার হাত দুটোকে সরিয়ে দেবার চেষ্টা করলাম। যথারীতি এক চুলও নাড়াতে পারলাম না। পেছন ছেড়ে রাজেশদা এখন আমার এই দুটোকে নিয়ে পড়েছে, আমি ছাড়ো ছাড়ো বললেও শুনছে না। মনের আনন্দে পক পক পক করে টিপছে আর তার সাথে গলায় ঘাড়ে চুমু খাওয়া চালিয়েই যাচ্ছে। ভালো আমারও লাগছিল কিন্তু আমি ঠোঁট কামড়ে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণ পরে আর থাকতে না পেরে বললাম রাজেশ দা রুমে এসো, কেউ দেখতে পেলে কেলেঙ্কারি হবে। রাজেশদা সঙ্গে সঙ্গে আমাকে ছেড়ে দিল আর আমার হাত ধরে বলল, চলো অতসী। হাত ধরাধরি করে আমরা দুজনে আমার রুমের দিকে এগোলাম।
আমি ভেবেছিলাম রুমের মধ্যে ঢুকেই রাজেশ দা আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে, কিন্তু ও ওরকম কিছু করল না। রাজেশ দা এসে বিছানার উপর বসলো আর আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল, অতসী এবার তুমি শুরু করো। আমি রাজেশদার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, আমিও কি এটাই চেয়েছিলাম! একবার সম্পর্কে থাকার পরে একা থাকা কঠিন। কিন্তু রাজেশদার সাথে কি সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছি, এক রাতের বন্ধু? আমার এই স্বরুপ আমার নিজের কাছেই অচেনা অজানা। রাজেশদা বেশি ভাবার সময় দিল না, আমাকে বলল অতসী কি ভাবছো এত, এসো আমার কাছে।
রাজেশদা খাটে বসে আছে আর একটু দূরেই আমি দাঁড়িয়ে আছি। আমি হেসে বললাম সবাই অতসীর দিকে ছুটে আসে, অতসী নিজে থেকে কারও দিকে এগিয়ে যায় না। এই বলে আমি নিজেই মডেলদের মত করে হেঁটে রাজেশদার দিকে এগিয়ে গেলাম। রাজেশদার কাছে যেতেই রাজেশদা চোখ দিয়ে ইশারা করল রাজেশদার কোলে বসার জন্য। আমি কোন উত্তর না দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে গেলাম। একটু এগিয়ে আবার ঘুরে গিয়ে দেখি রাজেশদা গেঞ্জিটা খুলে খালি গা হয়ে গেছে।
রাজেশদা কে খালি গায়ে দেখে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেলাম। সেটা রাজেশদার পেটাতো চেহারা বা বুকের অল্প কাঁচা পাকা চুলের জন্য নয়। আমার মনে হল এইবার অতসী তোমার পালা, আর পিছিয়ে আসার কোনো জায়গা নেই। আমি আর না এগিয়ে দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। এবার রাজেশদা নিজেই এগিয়ে এলো। আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল, তুমি নিজেই খুলবে না আমি খুলে দেব? কি বলবো বুঝতে না পেরে বললাম, বিকেল থেকে সবকিছু তো আমাকে জিজ্ঞেস করেই করছো! রাজেশদা বললো এখনো তো কিছুই করিনি মামনি, এবার করতে শুরু করব।
শুরু করল ঠোঁটে চুমু খেয়ে, তারপরে গলায়। গলায় চুমু খেতে খেতেই আবার টপের বোতাম খোলার চেষ্টা করছে। আমি বললাম ছিঁড়ে যাবে আমি খুলে দিচ্ছি। বোতাম খুলে দিতেই রাজেশদা বলল হাত তোলো সোনা। আমি বললাম রাজেশদা লাইটটা নিভিয়ে দি না। তা হবেনা অতসী, তোমার এই কথাটা আমি আজকে রাখতে পারব না। তুমি না বড্ড অসভ্য রাজেশ দা, এই বলে আমি হাত দুটো তুলে দিলাম। তুমিও অসভ্য হয়ে যাও অতসী, আজকে রাত আমরা স্মরণীয় করে রাখি। এই বলে আমার টপটা খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
হাত দুটোকে সরাও অতসী, আর লজ্জা পেওনা। এই বলে নিজেই আমার হাত দুটোকে সরিয়ে দিল। তোমার তো সব লোম খাড়া হয়ে গেছে অতসী, খুব ভালো লাগছে তাই না? মনে মনে ভাবলাম খাড়া তো তোমারও হয়ে গেছে, কিন্তু কিছু বললাম না। রাজেশদা এক পা পিছিয়ে গিয়ে আমাকে দেখতে লাগলো। কি দেখছ এমন করে রাজেশ দা, কোনদিন কাউকে দেখনি মনে হচ্ছে! অল্প হেঁসে রাজেশদা বলল, ব্রা কিন্তু আমি নিজের হাতে খুলব অতসী। কোন কথা না বলে আমি পিছন দিকে ঘুরে গেলাম। রাজেশদা হুঁক খুলে দিল কিন্তু ব্রা পুরোপুরি সরালো না।
পিঠের শিরদাঁড়া বরাবর চুমু খেলে যে এত ভালো লাগে, সেটা তো আমার ধারণাতেই ছিল না। রাজেশদা চুমু খেতে খেতে মাঝে মাঝে চেটে দিচ্ছে আর আমি শিউরে শিউরে উঠছি। চাটাচাটি করতে করতেই ও পেছন থেকে আমার বুকের দখল নিলো। ব্রায়ের ভিতর দিয়ে দু-তিন বার পক পক করেই আমাকে সামনে ঘুরিয়ে নিল আর আমার ব্রা পুরোপুরি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিল।
আমাদের দুজনেরই উর্দ্ধাঙ্গ সর্ম্পূণ অনাবৃত। আমরা একে অন্যের দিকে নিষ্পলকে তাকিয়ে আছি। রাজেশদার সামনে আর লজ্জা লাগছে না, বরং ভালোই লাগছে। রাজেশদা আর দেরি না করে আমার বুকে মুখ রাখলো। উফ্ কি যে ভালো লাগছিল! কখনো চুমু খাচ্ছে, কখনো চুষছে, কখনো পুরোটা মুখে পুরে নেবার চেষ্টা করছে, কখনো জিভ দিয়ে চাটছে, দু একবার আস্তে করে কামড়েও দিলো। আমি রাজেশদার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছিলাম। রাজেশ দা যখন একটাতে মুখ দিচ্ছে তখন অন্যটাকে ময়দা মাখার মতো করে মাখছে, বা নবের মত এদিক-ওদিক ঘোরাচ্ছে। মিনিট দশ পনেরো পর যখন ছাড়লো তখন আমার বুক দুটো লালায় চকচক করছে, আর লাল হয়ে যাওয়া বুকে অজস্র আদরের দাগ।
বুক ছেড়ে রাজেশ দা আমার চোখের দিকে তাকালো। আমি বুঝতে পারলাম কি হতে চলেছে, আর চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম যে আমি তৈরি। আমি একটা লং স্কার্ট পরেছিলাম আর রাজেশদা স্কার্টের বোতাম গুলো খুলে এক টান দিয়ে নিচে নামিয়ে দিল। একটা ভিজে যাওয়া প্যান্টি পড়ে আমি তখন রাজেশ দার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পরের হ্যাঁচকা টানে সেই প্যান্টিও হাঁটু অব্দি নেমে গেল।
বিছানায় এসো অতসী, আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। আমি বিছানার ধারে গিয়ে বসলাম। রাজেশদা আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, তুমি নিজের হাতে আমার প্যান্ট খুলে দিলে আমার খুব ভালো লাগবে। আমি ঢোক গিলে বললাম ঠিক আছে, তারপর নিজেই রাজেশদার প্যান্ট খুলে দিলাম। প্যান্টের পরে জাঙ্গিয়ারটা টেনে নামাতেই রাজেশদার ওটা লাফ দিয়ে বেরিয়ে এলো। আমি আশা করেছিলাম রাজেশদা হয়তো আমাকে বলবে ওটাকে আদর করতে করে দিতে। কিন্তু রাজেশদা ওসব না করে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল এবার শুয়ে পড়ো।
আমি চিৎ হয়ে শুয়ে পরতেই রাজেশদা আমার দু পায়ের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো। আমার পা দুটো সরিয়ে ওটাকে ঠিক জায়গা মত সেট করল আর তারপরে ..... প্রথম ধাক্কাতেই ওটা মনে হয় অর্ধেকের মতো ঢুকে গেল আর আমি আহঃ করে উঠলাম। রাজেশদা আমাকে বলল কোন অসুবিধা হবেনা অতসী, তুমি ঠিক পারবে। আমি তো জানি যে আমি পারবো, কিন্তু লজ্জার সেটা আর বললাম না। একটু পরেই শুরু হলো রাজেশদার খ্যাপা ষাঁড়ের মতো গুঁতোগুঁতি। আমিও কখনো বিছানার চাদর আঁকড়ে কখনো রাজেশদাকে ধরে সঙ্গত করতে লাগলাম। খানিকক্ষণ পাগলের মত করার পর রাজেশদা এক মুহুর্তের জন্য থামল। তারপরে আবার শুরু করলো। এইবার আর পাগলের মত করছে না, বরং কখনো ধীর লয়ে করছে, কখনো দ্রুত গতিতে । এইভাবে বেশ খানিকক্ষণ চলার পরে আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না, রাজেশ দা বলল আমারও হবে। আমি বললাম বাইরে, কিন্তু কারো কথা কে শোনে! যথারীতি পুরোটা ভেতরে ফেলল।
কাজ শেষ করে রাজেশদা বাথরুমে পরিষ্কার হতে গেল। আমার মনে হচ্ছিল স্নান করি কিন্তু এত রাতে স্নান করলে ঠান্ডা লেগে যাবে, তাই ওয়াইপস দিয়ে পরিষ্কার করে নিলাম।
আমরা আমরা দুজনে এখন পাশাপাশি শুয়ে আছি, একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু কথা বলছি না। রাজেশদা বলল এসো আতসী বালিশটা সরিয়ে দিয়ে আমার হাতে মাথা রাখ। আমি জিজ্ঞাসা করলাম তোমাকে বললাম ভেতরে না ফেলতে, তাও ফেললে কেন? রাজেশ দা বলল আজকে প্রত্যেকবারই তোমার ভেতরেই ফেলবো। আমি বললাম কেন সাধ এখনো মেটে নি? তুমি খুব সুন্দর অতসী, তোমার সাথে সারা জীবন করলেও আমার সাধ মিটবে না।। আমি খুশি হয়ে রাজেশদার দুই গালে নাকে চোখে কপালে থুতনিতে একটু চুমু খেয়ে নিলাম। রাজেশদা আমার একটা হাত রাজেশদার ওটার উপর রেখে বলল একটু আদর করে দাও। ওটাকে আদর করতে শুরু করতেই রাজেশদা আবার আমার উপর চড়ে বসলো। আমার মুখের কাছে মুখ এনে আমার পুরো মুখ জিভ দিয়ে চেটে দিল। আমি বললাম চাটছো কেন এরকম করে! রাজেশ দা কোনো উত্তর না দিয়ে একটা বালিশ আমার কোমরের তলায় রাখলো। আমি বললাম, পারবে এখনই? তোমার কষ্ট হবে না তো?
এইবার যেন রাজেশদা এক্সট্রা এনার্জি পেয়ে গেছে। করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে ক্লান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণই নেই। বেশ খানিকক্ষণ পরে আমাকে বলল অতসী তুমি একবার ওপরে উঠবে নাকি? আমি রাজেশদার উপরে উঠে করতে লাগলাম আর রাজেশদা কখনো আমার চুলে হাত বুলিয়ে আদর করছে, কখনো আমার ওই দুটো নিয়ে খেলছে। এইভাবে খানিকক্ষণ চলার পর রাজেশদা আবার আমাকে চিৎ করে দিল। এইভাবে আদি অনন্তকাল চলার পরে রাজেশদা আবার আমার ভেতরে ফেলল। তারপরে আমরা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ভোর হয়েছে কি হয়নি রাজেশ দা আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিল। আমি ঘড়িতে দেখি সাড়ে চারটে বাজে। আমি বললাম কি হলো? এখন ডাকলে কেন? রাজেশ দা বলল কেউ যদি আমাকে তোমার রুম থেকে বেরোতে দেখে তাহলে কি ভাববে! আমাকে এখনই বেরোতে হবে, আর তোমাকে না বলে আমি বেরোতে পারি না। এই বলে আমাকে একটা ছোট্ট চুমু খেয়ে রাজেশদা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
১০-১৫ মিনিট হয়েছে কি হয়নি দরজায় নক। খুব বিরক্ত হয়ে উঠে আইহোল দিয়ে দেখি বাইরে রাজেশদা। আমি দরজা খুলে দিলাম, দেখি রাজেশদা রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে হাজির। আমি অবাক হয়ে বললাম এই ভোরে তুমি কোথায় যাচ্ছ? রাজেশদা বলল আমি একা নয়, সোনা, আমরা এখন মুম্বাই যাচ্ছি। এখানে থাকলে আমি সারাদিন তোমাকে আদর করতে পারব না। আমি অবাক হয়ে বললাম আরে আমি তো রেডি হয়নি, খাইনি, জামা কাপড় পরিনি। আর তোমার সাথে আমি মুম্বাই যাবোই বা কেন, আমি তো থাকি থানেতে। অনেক আদর হয়েছে, এখন আমি ঘুমাবো।
আমার রেডি হতে মিনিট কুড়ি পঁচিশ লাগলো। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমরা হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। রাজেশদা গাড়ি করে আমাকে থানেতে আমার ফ্ল্যাটে নামিয়ে দিল। তারপরে সন্ধ্যা অবধি আমার ফ্ল্যাটেই রইলো। যাবার সময় বলে গেল, পরের উইকেন্ডে আমরা কোথায় যাব ঠিক করো।
সমাপ্ত।
মন্তব্যসমূহ