গোসল সেড়ে বাইরে এসেই অনেকটা ফুরফুরে লাগলো নিজেকে।অনেকদিন পর গোসল করেছে সে তাই হয়তো একটু বেশিই ভালো লাগছে তার।অর্নিলা টিভি দেখছিলো তখন।নিশাণ কাছে গিয়ে ওর পাশে এসে বসেই গালে আলতো করে একটা চুমো দিয়ে বেডরুমের দিকে চলে গেল।অর্নিলা মুচকি হাসে শুধু,ও নিশাণকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসে।নিশাণও কম না, সেও পাগলের মতো ভালোবাসে অর্নিলাকে।ভার্সিটির একটা কথা মনে পড়ে গেল অর্নিলার। ওইদিন ভার্সিটিতে ঠিক এভাবেই পুরো ক্লাসের মাঝে নিশাণ হুট করেই আলতো করে চুমো খেল অর্নিলার গালে।ক্লাসমেট সবাই হই হই করে উঠলো,কেউ শীষ বাজালো কেউ আবার তালি দিয়ে উঠলো।কেউ খেয়ালই করলো ক্লাসে স্যার ছিলো,সবার এমন হই হুল্লোড়ে তিনি বেশ চটে গিয়ে এক গাধা বকা সকা করে ক্লাস ছেড়েই বের হয়ে গিয়েছিলেন।তবুও বন্ধুবান্ধবদের মজা করা থামে না,তারা খুছিয়ে খুছিয়ে নিশাণ অর্নিলাকে নিয়ে লাফালাফি করছিলো।সবার এই কান্ড দেখে নিশাণ আবার সবার সামনেই আরেকটা চুমো দিয়ে বসলো।অর্নিলা তো লজ্জায় লাল,সবার সে কি হাসাহাসি।
এইসব ভাবছিলো অর্নিলা,এমন সময় নিশাণ পিছন থেকে এসে অর্নিলার দুচোখে হাত রেখে জিজ্জেস করলো,"বলোতো সোনা আমি কে?"
অর্নিলা মুচকি হেসে নিশাণের হাতে হাত বুলাতেই ভয়ানক চমকে উঠলো।একি ভয়ানক হাত ছিল নিশাণের পুরো হাতটাই লোমশ আর শক্ত।দুই হাতই এক,পুরোটা লোমে ঢাকা।অর্নিলা প্রচন্ড ভয়ে চিৎকার করতেই ব্যস্ত হয়ে হাত সরিয়ে নিল নিশাণ।সামনে এসে অর্নিলার গালে হাত বুলিয়ে ওকে শান্তনা দিতে লাগলো।নিজেকে কিছুটা সামলে অর্নিলা ভালো করে নিশাণের দিকে তাকালো।কিছুটা শীত পড়ছিলো, তাই নিশাণ ঊলের একটা সোয়েটার পড়েছিলো।সেটার মধ্যে হাত লাগতেই অর্নিলা লোমশ ভেবে ভুল করেছিল।নিজের ভুলে সে যথেষ্ট লজ্জিত হল।নিশাণ অর্নিলার হাতে হাত রেখে নরম সুরে চিৎকারের কারন জিজ্ঞেস করলো।অর্নলা সব গোপন করে বলল-
.
-না গো তেমন কিছু না।অন্যমনস্ক ছিলাম তো,হঠাৎ করে ভয় পেয়ে গেছিলাম।বুঝতে পারি নি তুমি এসেছো।
-তাই বলো,আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম নিজেই।
.
নিশাণ গল্প করে অর্নিলার মন থেকে ব্যাপার সরিয়ে দিল।প্রস্তাব করলো রাতের রান্না আজ দুজন মিলেই করবে।অর্নিলা খুব খুশি হল এতে।
রাত তখন ৮ঃ১০ টার মত হবে।রান্না শেষ করে ওরা ডাইনিং টেবিলে নিয়ে গেল।কি মনে পড়তেই নিশাণ বলে উঠলো-
.
-বেবি তুমি একটু বসো।আমি রান্নাঘরে গিয়েই মাছের ঝোলটা নিয়ে আসি।ভুলেই গেছি ওটা আনতে।
.
অর্নিলাকে বসিয়ে রেখে নিশাণ রান্নাঘরের দিকে চলে গেল।চারপাশ ভালোভাবে লক্ষ্য করে নিজের পা আর সোয়েটার তুলে হাতের দিকে তাকালো।হাতের লোম গুলো আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো আর পায়ের আকৃতি ধীরে ধীরে পাল্টে চারপেয়ে জানোয়ারের রুপ নিতে লাগলো।নিশাণ ব্যস্ত হয়ে এদিক ওদিক করতে থাকে আর কি যেন খুঝতে থাকে।হঠাৎই চোখ গেল উপরের একটা তাকের দিকে। সেখানে একটা কৌটার ভিতর শেয়ালের মুন্ডুর গুড়ো এনে রেখেছিল নিশাণ ওইদিন রাতে।দেরি না করে ঝটপট সেখান থেকে কিছু গুড়া নিয়ে পানিতে মিশিয়েই গিলে ফেলল খানিকটা পুরো শরীরটা একটা ঝাকুনি দিয়ে উঠলো।হাতের লোমগুলা ধীরে ধীরে ছোট হতে হতে স্বাভাবিক হয়ে এল,পায়ের ধরন স্বাভাবিক মানুষের মত পরিবর্তিত হতে লাগলো।এই যাত্রায় নিশাণ নিজেকে লুকাতে পেরে সস্তির নিশ্বাস ফেলে ডাইনিং রুমের দিকে পা বাড়ালো।।নিশাণকে দেখেই অর্নিলা রহস্যময় হাসি মুখে এনে মজা করে বলল-
.
-বাব্বা,এতোক্ষণ লাগলো তোমার এই ঝোলটুকু আনতে! আমি ভাবলাম তুমি বাইরে গিয়ে কিনতে গেছো।
.
নিশাণ কিছু বলল না, শুকনো হেসে অর্নিলার পাশে এসে বসল।বেশ তৃপ্তি করে রাতের খাবার শেষ করলো ওরা।তারপর টিভিতে একটা মুভি চালিয়ে দেখতে লাগলো।রাত তখন প্রায় ১২ঃ৩০ বাজে। অর্নিলা ইশারায় বুঝালো ওর ঘুম পাচ্ছে।নিশান অমনি রহস্যময় কন্ঠে বলল-
.
-দাড়াও দেখাচ্ছি তোমার ঘুম।আজ তো তোমাকে ঘুমাতে দিবো না আমি।হাহাহাহা।
.
নিশাণ উষ্ম চুমো খেল অর্নিলার ঠোটে।অর্নিলাও সাড়া দিল নিশাণের স্পর্শে।বিছানায় গেলো তারা,উপভোগ করতে লাগলো সময়টা।উত্তেজনায় একটা জিনিস অর্নিলা খেয়ালই করে নি যে,মুহুর্তে মুহূর্তে নিশাণের শরীর ভয়ানকভাবে গরম হয়ে যাচ্ছিলো আবার ক্ষনিক পরেই একদম ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো।তবে এইটুকু সে খেয়াল করেছিলো যে অন্যদিন এই সময়টাতে ভালোবাসা মিশে থাকতো কিন্তু সেদিন যেন ছিল অন্যরকম।যেন পশুর মতো ভোগ করেছিল অর্নিলাকে।
.
রাত তখন ২ঃ০০ টা বাজে। হালকা ফ্রেশ হয়ে নিশাণ অর্নিলা শুয়ে পড়লো।প্রায় আধাঘন্টা পর নিশাণ জেগে উঠে পরীক্ষা করলো অর্নিলা ঘুমিয়ে পড়েছে কিনা।নিশ্চিত হয়ে সে ফের রান্নাঘরে পা বাড়ালো।তাকের উপরে ওই কৌটোর পাশে আরো কয়েকটা কৌটো ছিল।তার মাঝখান থেকে একটা নিয়ে কিছু হাড়ের গুড়ো নিয়ে পানির সাথে মিশিয়ে গিলে ফেলতে ফেলতে নিজ মনেই বলে উঠলো,"আর কতোদিন এইভাবে নিজেকে লুকিয়ে রাখবো।এই সামান্য মন্ত্র পড়া হাড়ের গুড়ো আমার রুপ কিভাবে লুকাবে।এই ভয়ানক তাপ আর হিমশীতল ভাব কয়দিন ঢেকে রাখবে।ধিক জানাই এই প্রাণকে,তিরষ্কার জানাই রোজ।এইবার আমি মুক্তি চাই।"
সাথে সাথে চারপাশে তান্ডব শুরু হলো। পুরো ঘরের লাইটগুলো এবার জ্বলতে আবার নিভতে লাগলো।নিশাণ এগুলোর সাথে পরিচিত,সে ভয় পেল না।ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো রান্নাঘরের এক কোনায় গিয়ে।অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো পুরো রান্নাঘর। হঠাৎ থেমে গেল সেই প্রেতের হাসি,থেমে গেল সব তান্ডব।গমগমে এক পরিবেশ তৈরি হল।কালো কাপড়ে ঢাকা একটা ছায়ামূর্তি নিশাণের সামনে এসে দাড়ালো, কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললো,"অপেক্ষা করে যা,তোকে যে আরো ১০ মাস ১০ দিন অপেক্ষা করতে হবে যে।"
সকাল বেলায় অর্নিলা ঘুম থেকে উঠে পাশে তাকিয়ে দেখে নিশাণ নেই।এতো সকাল সকাল নিশাণের তো ঘুম থেকে উঠার কথা না,তাই বেশ অবাকই হল সে।চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় যেতে নিশাণকে দেখলো বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে আছে।অর্নিলা পিছনে এসে দাড়ালো, কিন্তু নিশাণ টেরই পেল না।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে।অর্নিলা ওর কাধে হাত রাখতেই চমকে উঠে পেছনে তাকালো নিশাণ।ভয় পেয়ে কয়েক পা পিছনে সরে এল অর্নিলা।একি দেখছে সে!নিশাণের চোখে কোন মনি নেই, পুরোটা চোখই সাদা;একেবারে দৃষ্টিশূন্য। কাতর সুরে শুধু এইটুকুই বলল নিশাণ,"আমাকে ক্ষমা করো অর্নিলা।"
এরপরই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল।অর্নিলা ছুটে গিয়ে ধরতে গিয়েও পারলো না।তার আগেই ফ্লোরে পড়ে গিয়ে মাথার এক পাশ কিছুটা ফেটে যায় নিশাণের।রক্ত গড়িয়ে পড়ে,অর্নিলার বুক ছ্যাত করে উঠলো।কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না ওই সময়ে। কিন্তু এমনি সময়ে অর্নিলা নিজের উপর থেকে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলল।স্পষ্ট বুঝতে পারে যে সে আর নিজের মাঝে নেই,অন্য কেউ যেন তাকে চালনা করছে।রুম থেকে মোবাইলটা এনে এম্বুলেন্স এ ফোন করে ঠিকানা দিয়ে দ্রুত আসতে বললো।তারপর দৌড়ে গিয়ে স্যাভলন আর ব্যান্ডেজ এনে ক্ষতস্থান হালকা পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ করে নিল।কিছুক্ষনের মাঝেই এম্বুলেন্স এসে পড়লো,এরা খুব ফাস্ট কাজ করে।নিশাণকে হাসপাতালে নেয়া হল।বাসায় জানাতেই ওর মা বাবা এসেও হাজির হল।অর্নিলা সব খুলে বলল তাদের কাছে,কিন্তু চোখের দৃষ্টিশূন্যতার কথাটা গোপন করলো।অর্নিলা কথাগুলা বলতে বলতে কিছুটা কাপছিলো।নিশাণের মা ওকে মাথায় হাত বুলিয়ে জড়িয়ে ধরে সান্তনা দিল।অপেক্ষার প্রহর শেষ হল,ডাক্তার এসে জানালো তেমন কিছুই হয় নি নিশাণের।খুব মানসিক চাপের মাঝে ছিলো হয়তো তাই ব্রেনে খুব প্রেশার পড়েছে।শীঘ্রই যেন ওকে একজন সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।চিন্তার কোন কারন নেই।এই বলে ডাক্তার চলে গেলেন।নিশাণের জ্ঞান ফিরেছে,চোখের সামনে নিজের প্রিয় মানুষগুলোকে দেখে অনেকটা ভালো লাগলো।কিন্তু অবাক করা বিষয় হল সে কিছুই মনে করতে পারছিলো না।ডাক্তারের কথামতো অর্নিলাও আর কিছু জিজ্ঞেস করলো না।বেচারা এমনিতেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে।হসপিটাল থেকে রিলিজ করিয়ে নিশাণকে আর ফ্লাটে ফিরতে দিলো না তার বাবা।অর্নিলাকে সাথে নিয়ে নিজেদের বাসায় নিয়ে গেলেন।দু তিন দিনের মাঝে নিশাণ সুস্থ হয়ে উঠলো।অর্নিলা খেয়াল করলো নিশাণের কোন কথাই মনে নেই।যতবার জিজ্ঞেস করা হচ্ছিল বার বার একই কথা বলে যে ওইদিন রাতে সিনেমাহল থেকে ফিরে গাড়ি পার্ক করতে গ্যারেজে গিয়েছিল।পুরোটা গ্যারেজ দুর্গন্ধ হয়ে গিয়েছিল বাজে একটা গন্ধে।চাকা থেকেই নাকি গন্ধটা বের হচ্ছিলো।বাকিটা আর কিছুই জানে না নিশাণ।অর্নিলা অবাক হয়ে গেল,সব মনে আছে খালি অল্প এই কয়দিনের কিছুই মনে নেই ওর?
.
নিশাণের বাবা সিদ্ধান্ত নিল এই মাসেই তার আর অর্নিলার বিয়েটা সম্পন্ন করে দিবেন।দুইজনই রাজি কারন তাদের ভালোবাসা স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে।
.
ধুমধাম করে কিছু করা হলো না।কাছের আত্মীয় দের দাওয়াত করা হয়েছিল ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান আরকি।বড় করে পরে অনুষ্ঠান করা যাবে।
.
ভালোই যাচ্ছিলো নিশাণ আর অর্নিলা বৈবাহিক জীবন।কয়েক মাস পর অর্নিলার শরীর খারাপ করাতে ডাক্তারের কাছে নিয়ে পরীক্ষা করতেই জানা গেল নিশাণ বাবা হতে চলেছে।ওর খুশি আর দেখে কে! মা বাবা,বন্ধুবান্ধব সবাইকে এক এক করে ফোন দিয়ে জানালো খবরটা।অর্নিলাকে নিয়ে ঘরে ফিরতে গাড়িতে চেপে বসল নিশাণ।বিয়ের পর ওর বাবা ফাইনালি ওকে গাড়ি কিনে দিয়েছে আর ঠাট্টা করে বলেছিলো,"বেশিদিনের জন্য দিলাম না কিন্তু।হাহাহাহাহা।"
নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করে বাসায় ফিরছিলো।দুজনই প্রচুর খুশি ছিল। পিছনের সিটে লক্ষ্যই করলো না যে একটা জানোয়ার বসে আছে।পুরো জানোয়ার বলা যায় না এটাকে অনেকটা মানুষের মত দেখতে,কিন্তু বিকৃত আকৃতির একটা মানুষের মত।একবার তাকাচ্ছিল নিশাণের দিকে আরেকবার তাকাচ্ছিলো অর্নিলার দিকে।তারপর অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো,কেউ শুনলো সেই অমানুষিক ভয়ানক হাসি।
চিৎকার করে উঠলো মানুষ আকৃতি জানোয়ারটা।বিড়বিড় করে নিজ মনেই বললো," অবশেষে অপেক্ষা শেষ হতে যাচ্ছে আমার, মুক্তি পাবো আমি।ফিরে পাবো আবার আমার মানব জীবন আর অসীম শক্তি।আর তো ৭-৮ মাসের অপেক্ষা মাত্র।হাহাহাহাহা।"
তারপর খুব কাছ থেকে অর্নিলাকে দেখতে লাগলো,যেন কতদিন পর দেখেছে তাকে।অনেকক্ষণ একনাগাড়ে তাকিয়ে থেকে ফের অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো সে।হঠাৎ হাসি থামিয়ে নিজ মনেই আবার বলতে লাগলো,"হাহাহাহাহা,আমাকে আমিই জন্ম দিচ্ছি।আমিই আমার বাবা, হাহাহাহাহা।"
তারপর অর্নিলার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,-
"আম্মু আমি আসছি।".
সময় পার হয়ে যাচ্ছিলো।প্রায় ৩ মাস গড়িয়ে গেল ততদিনে।উল্লেখ করার মত কোন ঘটনা তেমন ঘটে নি।অর্নিলা একদিন চিন্তিত মুখে নিশাণকে ডেকে বলল-
.
-তোমাকে কয়দিন ধরেই একটা কথা বলবো বলবো ভাবছি আর বলা হয়ে উঠেনি।আমার না কেন যে মনে হচ্ছে আমাদের সন্তান আমার পেটের মাঝে কেমন যেন আওয়াজ করে।মনে হয় যেন কি বলতে চায় আমি বুঝি না ঠিকভাবে।তার উপর একটা বাজে স্বপ্নও দেখেছি তোমায় কিভাবে যে বলি বুঝতে পারছি না।
.
নিশাণ অর্নিলাকে কাছে টেনে এনে কোলে বসিয়ে গালে আলতো করে চুমো খেলে বলল-
.
-না বুঝার কি আছে।আমি তোমার পর কেউ?কি এমন স্বপ্ন দেখেছ বল তো দেখি।
-আজ রাতেই স্বপ্নটা দেখেছিলাম।খুবই আজব একটা স্বপ্ন বুঝছো।আমি কেমন যেন পরিত্যক্ত একটা নির্জন জায়গায় শুয়ে ছিলাম।আশেপাশে কোন জনমানবের চিহ্ন পর্যন্ত ছিলো না।খুব ভয় করছিলো আমার।এমন সময় আমার খুব কাছেই যেন নিশ্বাসের শব্দ পেলাম।মাথাটা পাশ ফিরাতেই দেখি কেমন আজব একটা জানোয়ার ঠিক আমার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে।অনেকটা মানুষ আকৃতির তবে পুরো মানুষ না।চারপেয়ে একটা প্রাণি।পেছনের পা গুলা জানোয়ারের মতোই আর সামনের পা গুলো কি পা বলবো না হাত বলবো বুঝতে পারছি না।পা গুলো পুরো মানুষের হাতের মত। ৫টা আঙুল, প্রসস্থ হাতের তালু কিন্তু লম্বা লম্বা নখ।হঠাৎই জিনিসটা আমার উপর ঝাপিয়ে পড়লো।বাকি আমি বলতে পারবো না।
-আরে আমি কি পর কেউ?আর এটা তো একটা নিছক স্বপ্ন মাত্র।বলো তুমি আমি শুনছি।
-তারপর জানোয়ারটা জোরাজুরি করে সামনের হাত দুটো দিয়ে আমার কামিজ টেনে ছিড়ে ফেলল।তারপর, আমাকে ভোগ করতে শুরু করলো।শরীরের অনেকগুলো জায়গায় আছড়ে রক্তারক্তি করে ফেলে আমি সমস্ত শক্তি হারিয়ে ফেলে কিছুই করতে পারি নি।যা ইচ্ছে তাই করলো আমার সাথে ওই জানোয়ারটা।
.
এইটুকু বলে অর্নিলা একদম বাচ্ছাদের মতো কাদতে লাগলো নিশাণের বুকে মাথা রেখে।জিনিসটা স্বপ্ন হলেও নিশাণ কষ্ট পেল খুব।মায়া হচ্ছিল মেয়েটার উপর,সে তার সন্তানের মা হতে যাচ্ছে।নিশাণ শক্ত করে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে রাখলো।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বুঝালো,"এটা তো একটা স্বপ্নই।আর স্বপ্ন কি কখনো সত্য হয় নাকি।"
অনেক্ক্ষণ পর অর্নিলা কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে এল।সে পুরোটা স্বপ্ন বলতে পারে নি নিশাণকে কারন এতে সে ভেঙে পড়তে৷ পারে তাছাড়া ব্যাপারটা কিভাবে নিবে তাও বুঝতে পারছিলো না।যে জানোয়ারটাকে সে স্বপ্নে দেখছে তার চেহারা ছিল হুবহু নিশাণের মতোই তবে হিংস্র। আরো ভয়ংকর জিনিসটা হল পালাক্রমে জানোয়ারটা ওকে ভোগ করার পর ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,"তোর পেটে যে সন্তান আসবে সে হবে আমারই সন্তান।ওহ না ওইটা কোন মানব সন্তান হবে না,হবে একটা পিশাচ।আমিই হবো সেই পিশাচ, ওটা হবে আমার নতুন শরীর। এইভাবে আমি আর থাকতে পারছি না জানোয়ার মানুষ হয়ে।"
এরপরই অর্নিলার ঘুম ভেঙে যায়।এই কথাগুলো শুনলে নিশাণ হয়তো স্বাভাবিক থাকতে পারতো না।তাই অর্নিলা এসব কিছু নিশাণের কাছে লুকিয়েছে।তবে মনে মনে সে জিনিসটা শুধুই একটা স্বপ্ন হিসেবে নিল না।ওর কাছে জিনিসটা স্বাভাবিক মনে হয় নি।ভার্সিটি থাকতে সে একটা হুজুরের নাম শুনেছিলো যিনি নাকি দোয়াদরুদ পড়ে কিভাবে যেন জ্বিন হাজির করে সমস্যার সমাধান করে দেন।অর্নিলা ঠিক করলো ওই হুজুরের কাছেই যাবে সে।নিশাণকে বললে ও কিছুতেই রাজি হবে না।সিদ্ধান্ত নিল সে একাই যাবে সেখানে কারন রান্নাঘরে পায়ের চাপ,কফির সাথে যৌন উত্তেজক কিছু মেশানো সে মেনে নিতে পারে নি।তার উপর নিশাণ ওই সময়ের কিছুই মনে করতে পারছিলো না।তাহলে ওই দিন কফির সাথে নিশাণ কেন যৌন উত্তেজক কিছু মেশাতে যাবে।
বুধবার সকালবেলা যথারীতি নিশাণ অফিসে চলে গেল।অর্নিলা কিছুক্ষণের মাঝে প্রস্তুত হয়ে নিলো হুজুরের সাথে দেখা করার জন্য।এক বান্ধবীর কাছ থেকে ঠিকানা নিয়েই বেরিয়ে পড়লো একটা ট্যাক্সি নিয়ে।প্রায় ১ ঘন্টার মতই লাগলো ওখানে পৌছুতে।একতলা একটা টিনশেড বাড়ি,দরজার উপর একটা নাম লিখা।ওইটা হুজুরেরই নাম।অর্নিলা দরজা নক করার কিছুক্ষণ পরই হুজুর নিজেই এসে দরজা খুলে দিলেন।দুই রুমের একটা ঘর,কেউ থাকে না আর হুজুর ছাড়া।এক রুমে হয়তো হুজুর থাকেন অন্যটায় ভিক্টিম দের সাথে কথা বলার জন্য।অর্নিলাকে একটা মাদুর পেতে দিল ফ্লোরে বসার জন্য।প্রেগন্যান্ট ছিল অর্নিলা,তাই মাদুরে বসতে বেশ কষ্টই হচ্ছিলো তার।কিন্তু হুজুর সেসব খেয়ালে নিলেন না।বহু সাবধানে বসে পড়লো মাদুরের উপর। হুজুর কয়েকটা তসবি এনে অর্নিলার ঠিক সামনে বরাবর আরেকটা মাদুরে বসলো।তারপর হাতের তসবিটা গুনে গুনে কি যেন পড়তে লাগলেন।হঠাৎ সেটা থামিয়ে অর্নিলার চোখে চোখ রেখে বললেন,"বলো মা,কি সমস্যা তোমার।আমার কাছে কিছুই লুকাবে না।তোমার ছোট একটা কথাও হতে পারে তোমার সমস্যার সমাধান।"
অর্নিলা বড় একটা নিশ্বাস ফেলে শুরু থেকে শেষ পুরো কাহিনি খুলে বলল।হুজুর মন দিয়ে প্রত্যেকটা কথা শুনে চোখ বন্ধ করে আবার তসবি গুনে কি যেন পড়তে লাগলেন।অনেক্ক্ষণ কোন কথা বললেন না তিনি।তারপর আবার আগের মতো চোখ খুলেই হঠাৎ করে বলে উঠলেন,"মা তোমার স্বামীর রুপে তোমার সাথে কয়েকদিন একটা পিশাচ ঘর করেছে।সে ই তোমার সাথে সহবাসে লিপ্ত হয়েছে,যে সাদা গুড়োগুলো সে কফিতে মিশিয়ে ছিল সেটা ছিলো কাকে হাড়ের মন্ত্রসিদ্ধ গুড়ো যা মানুষের ভিতরে কামনার জন্ম দেয়।উদ্দেশ্যে তার একটাই তোমার গর্বে নিজের সন্তান দিয়ে ওই সন্তানের মাঝে সে নিজেই প্রবেশ করবে সে পিশাচ হয়ে।ও জীবদ্দশায় শয়তানের সাধক ছিলো, পিশাচসিদ্ধ হয়ে অনেক প্রেত শক্তি অর্জন করতে চেয়েছিল।বহু যজ্ঞের একপর্যায়ে তার একটা ভুল হয়ে যায় যার কারনে স্বয়ং শয়তান ওর উপর ভয়ানক রেগে ওকে ওই মানুষরূপী জানোয়ারে পরিনত করে দিয়েছে।কিন্তু বহু মাফ চাওয়ার পর ওর এতোদিন যজ্ঞগুলোর বিনিময়ে ওকে একটা সুযোগ দেয়া হল।তাকে বলা হয়েছিলো একটা পরিত্যক্ত রাস্তায় প্রতি ৭ দিনে একবার যজ্ঞে বসতে হবে আর শয়তানের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে হবে ওই যজ্ঞজুড়ে।যেদিন ও যজ্ঞে বসে থাকা অবস্থায় ওর সেই যজ্ঞ কেউ ভঙ্গ করে দিবে তার অথবা তার পরিবারের কারো সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হয়ে সন্তান জন্ম দিতে হবে।সেই সন্তানই হবে ওর মুক্তির মাধ্যম।আর ওই মুক্তিই হবে ওর সাধনার ফল,সে হাতে পাবে প্রেতশক্তি।ও একটা চক্র বানিয়ে চার কোনায় চারটা প্রাণির মুন্ডু বসিয়ে তার সামনে বসিয়ে যজ্ঞ করতে লাগলো আর শয়তানের ক্ষমা ভিক্ষা চাইতে শুরু করলো।তোমরা ভুলের বশে সেদিন ওর যজ্ঞ ভেঙেছো আর যার ফল এখন তুমি ভোগ করছো।তোমারই ভিতর বেড়ে উঠছে সেই পিশাচ।"
অর্নিলা অবাক হয়ে শুনলো পেটের ভিতেরে বাচ্ছাটা যেন কি বলে উঠলো।এবার অর্নিলা স্পষ্ট শুনতে পেল শব্দগুলো এরকম-
"আমি আসছি মা,মুক্তি দাও আমায়।"
মন্তব্যসমূহ