।। ৬ ।।
পরের দিন সকালে দিদির ডাকে যখন ঘুম ভাঙল, তখনও আগের রাতের মানস-মৈথুনের রেশটা মনের ভেতরে থেকে গিয়েছিল। কিন্তু বাজারে যাওয়ার তাড়ায় সেটা নিয়ে খুব বেশীক্ষণ ভাবা গেল না। তবে মনটা বেশ খুশি খুশিই ছিল।
এক হাতে বাজারের থলে নিয়ে যখন ফিরছি বাড়ির দিকে, তখনই মোবাইলে ফোন এল। কোনওমতে থলি সামলে ফোনটা ধরতেই ওপাশে অনিন্দ্যর গলা!
মনে মনে বললাম, যা শালা কাল রাতে ওইসব ভাবলাম আর আজই সাতসকালে তোমার ফোন।
গুড মর্নিং-টর্নিং বলে সে কাজের কথায় এল। আন্দামান যাওয়ার দিন – টিকিট সব কাটা হয়ে গেছে। আজই অফিস যাওয়ার পথে দোকানে এসে আমাকে পৌঁছিয়ে দিয়ে যেতে পারে ওর বউ সেগুলো। কখন দোকান খুলব, সেটা জানতে চাইল।
আমি বললাম, ‘দশটার সময় দোকান খুলি আমি।‘
অনিন্দ্য ‘আচ্ছা ঠিক আছে’, বলে ফোন রেখে দিল।
ফোনটা পকেটে রাখতে রাখতে মনে মনে ভাবলাম কাল রাতে যাকে মনে মনে রমন করেছি, সে হাজির হবে আমার দোকানে একটু পরেই। বাড়ি ফিরে জলখাবার খেয়ে দাড়ি টাড়ি কেটে বেরিয়ে পড়লাম দোকানের দিকে।
সময়মতোই – দশটার একটু পরে রূপসী এল দোকানে। ওকে এই সাজে কখনও দেখি নি। তাই প্রথমে বুঝতে পারি নি ঠিক। ও নিজেই বলল, ‘কেমন আছেন ফটোগ্রাফার?’
কয়েক সেকেন্ড ওর মুখের দিকে একটু অবাক হয়ে থাকার পরেই চিনলাম যে একেই কাল রাতে নগ্ন অবস্থায় ভেবেছি! আসলে কাল তো আর ওর মুখের কথা মনে করা হয় নি, আমার মন তো পড়ে ছিল ওর শরীরের দিকে।
কয়েক সেকেন্ডের বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠেই আমি বললাম, ‘ও, কেমন আছেন ম্যাডাম। আপনার হাসব্যান্ড ফোন করেছিলেন সকালে। দাঁড়িয়ে কেন.. বসুন বসুন।‘
রূপসী বলল, ‘না অফিস যাব, এমনিতেই আপনার কাছে আসতে হবে বলে একটু দেরী করে যাচ্ছি। বসলে আরও দেরী হয়ে যাবে। সামনের শনিবার ভোরের ফ্লাইটে আমাদের যাওয়া। হোটেল বুকিং হয়ে গেছে, সেসব আমাদের কাছেই রইল। এই নিন আপনার টিকিটটা – যদি আগে পৌঁছিয়ে যান, তাহলে চেক ইন করে নেবেন। আমরাও পৌঁছে যাব। ঠিক আছে? দেখা হবে তাহলে শনিবার।‘
‘প্রথম দোকানে এলেন, একটু চা খেয়ে যান!’ বললাম আমি।
‘না ভাই। খুব দেরী হয়ে যাবে অফিসে। এমনিতেই বিয়ের জন্য ছুটি, তারপর হানিমুনের ছুটি নিয়েছি। যাওয়ার আগে অনেক কাজ আছে,’ রূপসী দোকান থেকে বেরতে বেরতে বলল।
দোকানের পাশেই ওর গাড়ি দাঁড় করানো ছিল। নিজেই ড্রাইভ করে চলে গেল আমার স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা।
শনিবার আসতে এখনও তিনদিন বাকি আছে।
দুপুরে বাড়ি এসে গোছগাছ করে নিলাম। ছবি তোলার সাজসরঞ্জাম নিতেই একটা বড় ব্যাগ ভরে গেল। আরেকটা ব্যাগে আমার জামাকাপড়। ক্যামেরার ভারী ব্যাগটা তো আছেই।
কোনওদিন প্লেনে উঠি নি, তাই কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে জেনে নিয়েছিলাম যে ক্যামেরা আর অন্য ইকুইপমেন্ট কীভাবে নিয়ে যেতে হবে। সেইমতো সব গুছিয়ে নিয়ে শুক্রবার রাতে বেশ তাড়াতাড়িই শুয়ে পড়েছিলাম আমি। খুব ভোরে ফ্লাইট। পাড়ারই এক ট্যাক্সিওয়ালাকে বলে রেখেছিলাম এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেওয়ার জন্য।
রাত প্রায় চারটের সময় রওনা হয়েছিলাম সেদিন।
এয়ারপোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে ফোন করেছিলাম অনিন্দ্যকে। ওরা আর মিনিট দশেকের মধ্যেই পৌঁছবে – তাই আমি বাইরেই দাঁড়িয়ে ছিলাম।
অনিন্দ্য আর রূপসী যখন ট্যাক্সি থেকে নামল, আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম মালপত্র নামাতে সাহায্য করার জন্য।
তারপরে একসঙ্গে চেক-ইন করা – সিকিউরিটি চেক করা আর তারপরে ঘন্টা দুয়েকের বিমানযাত্রা – আমার প্রথম প্লেনে চড়া।
এ কদিনে অনিন্দ্য ওদের হানিমুনে কীধরণের ছবি চায়, তা নিয়ে একটা কথাও আর বলে নি। ভেবেছে হয়তো আমি নিজেই তুলে নিতে পারব। কিন্তু রূপসী সামনে না থাকার সময়ে অনিন্দ্যর সঙ্গে একটু কথা বলে নিতেই হবে আমাকে।
বীর সাভারকার এয়ারপোর্টে নেমে নিজেদের মালপত্র নিয়ে বাইরে এসে দেখি অনিন্দ্য আর রূপসীর নাম লেখা একটা বোর্ড নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে আছে। বোর্ডটাতে একটা রিসোর্টের নাম লেখা। পোর্ট ব্লেয়ারের একটু বাইরে সমুদ্রের ধারের এই রিসোর্টে যে থাকা হবে, সেটা রূপসী আগের দিনই বলে গিয়েছিল আমার দোকানে গিয়ে।
অনিন্দ্য বলল, ‘যাক পিক আপ করতে এসে গেছে। বড় রিসোর্ট তো, এদের মিস হওয়ার চান্স নেই। চলো দেবাশীষ।‘
মালপত্র রিসোর্টের লোকেরাই সব তুলে দিল। আমি সামনে বসতে চেয়েছিলাম – পেছনের সীটটা ওদের দুজনকে ছেড়ে দিয়ে।
অনিন্দ্য আর রূপসী দুজনেই জোর করে পেছনের সীটে ওদের সঙ্গেই বসালো আমাদের। রূপসী অনিন্দ্যর হাতটা ধরে নিজের কোলে রেখেছিল, ওর মাথাটা অনিন্দ্যর কাঁধে।
ড্রাইভার যখন গাড়ি নিয়ে পোর্ট ব্লেয়ারের একটু বাইরের দিকে গেল, তখন অনিন্দ্য বলল, ‘শোনো দেবাশীষ, তুমি ভাল করেই জান যে এখানে কেন আমাদের সঙ্গে এসেছ। একেবারে বাইরের লোকের মতো থাকবে না প্লিজ। তুমি ফ্রিলী যেমন ছবি তুলবে, তেমনই খাওয়া দাওয়া – থাকা সব আমাদের মতোই করবে কিন্তু। শুধু ফটোগ্রাফারের মতো থাকলে কিন্তু আমাদেরও তোমার সামনে ফ্রি হতে অসুবিধা হবে।‘
রূপসীও তাল মেলালো, ‘একদম। তুমি ফ্রি না হলে কিন্তু আমরা এঞ্জয় করতে পারব না।‘
আমি একটু হেসে বললাম, ‘ঠিক আছে...’
আমি যদিও জিগ্যেস করি নি যে আমার থাকার ব্যবস্থা কী করেছে ওরা, তাও জানি নিশ্চই ভালই বন্দোবস্ত করবে।
ওরা নিজেদের জন্য হানিমুন কটেজ বুক করেছিল আর আমার জন্য একটা ছোট্ট কটেজ – ব্যালকনিতে দাঁড়ালে সামনেই সফেন নীল সমুদ্র।
ঘরে ঢুকে ফ্রেস হয়ে নিয়ে ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম আমরা তিনজন। সঙ্গে আমার ক্যামেরা কিট।
অনিন্দ্য থ্রি কোয়ার্টার শর্টস পড়েছে, সঙ্গে টি শার্ট। আর রূপসী বেশ ছোট একটা শর্টস, আর পাতলা টিশার্ট। দুজনেরই চোখে সানগ্লাস, মাথায় ক্যাপ।
সেখানেই সুযোগ পেয়ে অনিন্দ্য আমাকে বলে দিল ‘যেমন খুশি ছবি তুলবে। আমাদের দুজনের কারও পারমিশন নেওয়ার দরকার নেই, বুঝলে?’
ক্লায়েন্টের কথা মতো চলাই আমাদের কাজের নীতি, তাই সম্মত না হয়ে উপায় নেই। তার ওপর এত খরচ করে আমাকে নিয়ে এসেছে!
‘তা আজ কী প্ল্যান আপনাদের?’
‘প্ল্যান আবার কী, সমুদ্র দেখা আর ঘরে গিয়ে .. হেহেহে .. বুঝলেই তো হানিমুনে কী করে লোকে!!’
মিচকি হাসলাম আমি।
‘বাই দা ওয়ে তোমাকে কিন্তু ঘরের ভেতরেও ওই সময়েরও ছবি তুলতে হবে,’ বলল অনিন্দ্য।
আমি খাওয়া শেষ করে কফি নিয়েছিলাম, ওর কথা শুনে হাত কেঁপে গিয়ে কফিটা চলকে পড়ল প্যান্টে।
‘কী ঘাবড়ে গেলে কেন? হানিমুনের ছবি তুলতে এসে তুমি কি বাল সমুদ্রের ছবি তুলবে নাকি? বউকে লাগানোর ছবিও তুলতে হবে.. বুঝলে বাঁড়া,’ হেসে বলল অনিন্দ্য।
একটু আমতা আমতা করে বললাম, ‘মানে...ওই সময়ে আমি থাকব? ম্যাডামের আপত্তি থাকতে পারে তো!’
‘ধুর বাল, বোঝো না কিছুই। সে না চাইলে ফটোগ্রাফার নিয়ে হানিমুনে আসতে পারতাম নাকি? এই আাইডিয়াটা সবটাই ওর.. কোনও ননবেঙলি বান্ধবী নিজের হানিমুনে ফটোগ্রাফার নিয়ে গিয়েছিল, সেই সব কিছু ছবি দেখার পর থেকে আমাকে জ্বালাচ্ছে – সুহাগ রাতের ভাল ছবি চাই... প্রথমে আমি তো পাত্তাই দিই নি – এ আবার কী .. বউকে লাগানোর সময়ে অন্য লোক ছবি তুলবে!! কিন্তু ওর জ্বালায় শেষ পর্যন্ত আমারও বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছিল ব্যাপারটা..’ বলল অনিন্দ্য।
‘দুজনে ফিস ফিস করে কী এত কথা হচ্ছে শুনি?’ হাতে একটা প্লেটে কিছু ফল নিয়ে টেবিলে এসে বসতে বসতে বলল রূপসী।
‘দেবাশীষকে বলছিলাম যে তুমি কী কী ধরণের ছবি তোলাতে চাও ওকে দিয়ে,’ বলল অনিন্দ্য।
কথাটা শুনেই রূপসীর গালটা বোধহয় একটু লাল হয়ে গেল। বরের কাছে কীধরণের ছবি তোলার আব্দার করেছে, সেটা তার জানা আছে। কিন্তু এখন সেটা অন্য একজন শুনে ফেলায় লজ্জা পেল বোধহয়।
তাড়াতাড়ি বলল, ‘এখন চলো তো বীচে যাই। হোটেলের বেশীরভাগ লোকই তো ওখানে।‘
খাওয়া শেষ করে বীচের দিকে যেতে যেতে বেশ কিছু ছবি তুললাম – ওদের দুজনের, আবার সমুদ্রেরও।
মন্তব্যসমূহ